ভারতে এয়ার ইন্ডিয়ার ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ১০০ জনের বেশি

আন্তর্জাতিক রুটে যাত্রী পরিবহনকারী এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমান ভারতের আহমেদাবাদ থেকে উড্ডয়নের কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিধ্বস্ত হয়ে অন্তত ১০০ জনেরও বেশি যাত্রীর প্রাণহানি ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (১২ জুন) দুপুরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় বিমানটিতে ২৪২ জন আরোহী ছিলেন। এটি ভারতের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা হিসেবে ধরা হচ্ছে।

এয়ার ইন্ডিয়া জানায়, বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার মডেলের বিমানটি লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করছিল। আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে রানওয়ে ২৩ দিয়ে বেলা ১টা ৩৩ মিনিটে উড্ডয়নের কিছু সময় পরই সেটি বিমানবন্দরের কাছাকাছি একটি আবাসিক এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। স্থানীয় সময় ১টা ৩৮ মিনিটে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

বিমানটি রাজ্য পরিচালিত বি.জে. মেডিকেল কলেজের হোস্টেলের খাবার কক্ষের ওপর ভেঙে পড়ে। এতে বহু মেডিকেল শিক্ষার্থী হতাহত হন। দুর্ঘটনার পরপরই বিমানবন্দরের আশপাশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয় এবং উদ্ধার তৎপরতায় নামে পুলিশ, দমকল বাহিনী ও সেনাবাহিনী।

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে একশোরও বেশি দগ্ধ মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এক জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা জানান, বিধ্বস্ত বিমানের বিভিন্ন অংশ ছড়িয়ে পড়েছে হোস্টেল ভবনের চারপাশে, লেজটি আটকে আছে ছাদের ওপর। ধ্বংসস্তূপের অন্তত ৮০ শতাংশ এলাকা ইতোমধ্যে পরিষ্কার করা হয়েছে।

এয়ার ইন্ডিয়া জানায়, বিমানটিতে ২১৭ জন প্রাপ্তবয়স্ক যাত্রী, ১১ শিশু, ২ নবজাতক এবং ১২ জন ক্রু সদস্য ছিলেন। আরোহীদের মধ্যে ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, ৭ জন পর্তুগিজ ও ১ জন কানাডীয় নাগরিক রয়েছেন।

সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, বিমানটি খুব নিচ দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল এবং হঠাৎ করেই একটি বড় বিস্ফোরণের মাধ্যমে সেটি বিধ্বস্ত হয়। পরে পুরো এলাকা আগুনের গোলায় পরিণত হয়।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক্স প্ল্যাটফর্মে দেওয়া এক বার্তায় বলেন, “আহমেদাবাদের দুর্ঘটনা আমাদের হতবাক করেছে। এটি এমন এক হৃদয়বিদারক ঘটনা যা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারও এ দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন। বিমানের যাত্রীদের মধ্যে ৫৩ জন ব্রিটিশ ছিলেন।

অ্যাভিয়েশন সেফটি নেটওয়ার্কের তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু করা ড্রিমলাইনার মডেলের কোনো বিমানের এটিই প্রথম বড় ধরনের দুর্ঘটনা। বিমানটি ২০১৩ সালে প্রথম আকাশে ওড়ে এবং ২০১৪ সালে এয়ার ইন্ডিয়ার বহরে যুক্ত হয়।

ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (ডিজিসিএ) এবং এয়ার ইন্ডিয়ার নিজস্ব তদন্ত দল দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে কাজ শুরু করেছে। বোয়িং কোম্পানিও এ বিষয়ে তাদের প্রযুক্তিগত বিশেষজ্ঞ পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে।

উদ্ধারকাজ এখনো চলমান রয়েছে। উদ্ধারকর্মীদের আশঙ্কা, ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও মরদেহ থাকতে পারে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।