অস্তিত্বহীন ডাকঘরে চাকরি জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার ইমরুল কায়েসের

খেলা ডেস্কঃ
Nov 12, 2025 - 18:33
 0  3
অস্তিত্বহীন ডাকঘরে চাকরি জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার ইমরুল কায়েসের

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক তারকা ব্যাটার ইমরুল কায়েস এখন সরকারি রেকর্ড অনুযায়ী মেহেরপুরের উজলপুর ডাকঘরের একজন কর্মচারী। মাসিক সম্মানী মাত্র চার হাজার চারশ নব্বই টাকা। কিন্তু বিস্ময়ের বিষয় হলো-যে ডাকঘরে তিনি কর্মরত, সেই অফিসের বাস্তবে কোনো অস্তিত্বই নেই।

বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই মেহেরপুরজুড়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, জাতীয় দলের ক্রিকেটার কী সত্যিই সাড়ে চার হাজার টাকার সরকারি চাকরিজীবী? নাকি এটি কেবল প্রভাব খাটিয়ে নেওয়া নামমাত্র নিয়োগ?

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি উজলপুর গ্রাম থেকে একাধিক চিঠি ও সরকারি নথিপত্র ফেরত যাচ্ছে প্রেরকের কাছে। এমনকি স্থানীয় ফয়সাল নামে এক ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ কাগজ পাননি। চিঠিটি ফেরত গেছে প্রেরকের কাছেই। কেউ কেউ চাকরির সাক্ষাৎকারের চিঠি না পাওয়ার অভিযোগও তুলেছেন।

সরেজমিনে উজলপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ডাকঘরের কোনো অস্তিত্ব নেই। নেই কোনো সাইনবোর্ড বা পোস্ট অফিসের চিহ্নও।

মেহেরপুর প্রধান ডাকঘরের নথি অনুযায়ী, উজলপুর ডাকঘরে ইমরুল কায়েস ও আব্দুল জলিল ‘ইডিএ’ (এক্সট্রা ডিপার্টমেন্টাল এজেন্ট) পদে এবং রাজু আহমেদ ‘ইডিএমসি’ পদে কর্মরত। কিন্তু গ্রামের বাসিন্দারা জানেনই না-তারা কারা বা কোথায় কাজ করেন। স্থানীয়দের মতে, জলিল নামের একজন চিঠি বিলি করতেন, কিন্তু তিনি এখন বিদেশে রয়েছেন।

অন্যদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইমরুল কায়েস বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার একটি ক্রিকেট একাডেমিতে প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মরত।

মেহেরপুর প্রধান ডাকঘরের পোস্টমাস্টার জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘চার-পাঁচ বছর হলো ইমরুল কায়েস ডাক বিভাগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। বিস্তারিত জানতে হলে বিভাগীয় ডাক পরিদর্শকের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তবে ইমরুল আমাদের এলাকার ছেলে, জাতীয় তারকা। তাকে নিয়ে নেতিবাচক কিছু না লিখলেই ভালো।’

বিভাগীয় ডাক পরিদর্শক অলক কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘২০২১ সালে তৎকালীন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের ডিও (দাপ্তরিক আদেশ) অনুযায়ী ইমরুল কায়েসকে উজলপুর ডাকঘরের ইডিএ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। মাসিক সম্মানী ৪ হাজার ৫০০ টাকা। এটি কোনো লাভজনক পদ নয়।’

তবে প্রশ্ন থেকেই যায়-যে ডাকঘর বাস্তবে নেই, সেখানে কীভাবে সরকারি নিয়োগ কার্যকর থাকে?

অস্ট্রেলিয়া থেকে ফোনে কালবেলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইমরুল কায়েস বলেন, ‘গ্রাম পোস্টমাস্টারদের কাজ চিঠি বিলি করা না। আমি পোস্ট অফিসের অনুরোধে তাদের সঙ্গে আমার নামটি যুক্ত করেছি, যাতে বাংলাদেশের ডাক বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি চিঠি ফেরত যাওয়ার বিষয়টি পোস্টম্যানের ভুল, আমার নয়।’

তিনি আরও জানান, ‘ইডিএ জলিল এখন ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরবে আছেন। দেশে ফিরলেই এ সমস্যা সমাধান করবেন।’

মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ আবদুল সালাম বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে সত্যতা মিললে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ অবশ্যই গ্রহণ করা হবে।’

স্থানীয়দের ভাষায়, ইমরুল কায়েস একজন সফল ক্রিকেটার হলেও তার পরিবার প্রভাবশালী। তার শ্বশুর জহুরুল ইসলাম মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এবং দেশের শীর্ষ ঠিকাদার ও পরিবহন ব্যবসায়ী। ফলে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন-গ্রামের কোনো দরিদ্র যুবকের পরিবর্তে এমন প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিকে এ পদে নিয়োগ দেওয়াটা কতটা ন্যায্য?

উল্লেখ্য, ইমরুল কায়েসের দাদা কায়েম বিশ্বাস পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া থেকে পঞ্চাশের দশকে মেহেরপুরে এসে বসতি গড়েন। তার দাদা ও বাবা দুজনেই গ্রাম পোস্টমাস্টার ছিলেন। ইমরুলের বাবা বনি আমিন বিশ্বাস ২০২০ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow