১৬ বছরের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ছিল জুলাই অভ্যুত্থান

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
Aug 5, 2025 - 13:56
 0  0
১৬ বছরের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ছিল জুলাই অভ্যুত্থান

একটি গণতান্ত্রিক, মানবিক ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি ৫ আগস্টকে শুধু একটি বিশেষ দিবস নয়, বরং একটি প্রতিজ্ঞা, গণজাগরণের উপাখ্যান এবং ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে জাতির পুনর্জন্মের দিন হিসেবে অভিহিত করেছেন।

মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সকালে, ঢাকা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দেওয়া এক ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, "১৯৭১ সালে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এদেশের জনগণ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। কিন্তু স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পরেও এদেশের মানুষ সুবিচার ও গণতন্ত্র থেকে বঞ্চিত হয়েছে, বৈষম্যের শিকার হয়েছে। ২০২৪ সালের উত্তাল জুলাই ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক সংকটময় অধ্যায় এবং ১৬ বছরের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।"

তিনি পূর্ববর্তী শাসনের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, "এদেশের বিপুল সংখ্যক তরুণ ১৬ বছর ধরে হতাশায় নিমজ্জিত ছিল। ভালো ফলাফল করেও চাকরির জন্য ক্ষমতাসীনদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছে। চাকরিকে ঘিরে তৈরি হয়েছিল দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি আর তদবির বাণিজ্য।" তিনি আরও যোগ করেন, "সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা পদ্ধতি ছিল দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির আরেকটা হাতিয়ার। এর বিরুদ্ধে তরুণ সমাজ দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবাদ করলেও ফ্যাসিবাদী শাসকের টনক নড়েনি।"

ড. ইউনূস অভিযোগ করেন, প্রতিটি সেক্টরে মাফিয়াতন্ত্র কায়েম করে একটি সুবিধাভোগী শ্রেণি তৈরি করা হয়েছিল, যারা আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কাজ করতো। তিনি বলেন, "এই দেড়যুগে প্রতিটি ন্যায্য দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের পাশাপাশি দলীয় সন্ত্রাসীরা অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। যারাই সরকারের সমালোচনা করেছে, তাদের গ্রেফতার অথবা গুম করা হয়েছে।"

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চূড়ান্ত মুহূর্তের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, "দেশের মানুষের বুকে গুলি চালিয়ে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে চেয়েছিল ফ্যাসিবাদী সরকার। তারা নির্বিচারে গুলি করেছে, গ্রেপ্তার করেছে, ইন্টারনেট বন্ধ করে হত্যাকাণ্ডের তথ্য লুকাতে চেয়েছে। এমনকি আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতেও বাধা দিয়েছে, যার কারণে বহু মানুষ চিকিৎসা না পেয়ে চিরতরে দৃষ্টি হারিয়েছে, পঙ্গু হয়েছে।"

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের "জাতির সূর্য সন্তান" আখ্যা দিয়ে তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি জানান, সরকার শহীদ ও আহতদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত ৮৩৬টি শহীদ পরিবারের মধ্যে ৭৭৫টি পরিবারকে ৯৮ কোটি ৪০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও মাসিক ভাতা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আহত ১৩,৮০০ জুলাই যোদ্ধাকে ১৫৩ কোটি ৪ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে এবং গুরুতর আহত ৭৮ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে।

ভাষণের শেষে ড. ইউনূস একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার শপথ গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, "আজ আমরা কেবল অতীত স্মরণ করতে আসিনি, আমরা একটি শপথ গ্রহণ করতে এসেছি। শপথ এই—আমরা কোনো ধরনের নিপীড়নের কাছে মাথা নোয়াবো না। আমরা প্রতিষ্ঠা করব একটি জবাবদিহিমূলক, মানবিক, গণতান্ত্রিক এবং বৈষম্যহীন রাষ্ট্র। জুলাই শহীদদের আত্মত্যাগ আমরা বৃথা যেতে দেব না। তাদের স্বপ্নই হবে আমাদের আগামী বাংলাদেশের নির্মাণ রাখা।"

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow