প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষে শেখ মুজিবের ছবি টানানোয় প্রধান শিক্ষিকা বরখাস্ত

পিরোজপুরের নেছারাবাদে বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টানানোয় এক প্রধান শিক্ষিকাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং শিক্ষক সমাজ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
সোমবার (৪ আগস্ট) উপজেলার সোনারঘোপ রমেশ চন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শামীমা ইয়াসমিনকে সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. খন্দকার জসিম আহমেদ।
ঘটনার সূত্রপাত হয় গত ৩ আগস্ট। প্রধান শিক্ষিকা শামীমা ইয়াসমিন, যিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার কন্যা, তার বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষে বঙ্গবন্ধুর একটি ছবি টানান। বিষয়টি দ্রুত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। চাপের মুখে তিনি ছবিটি সরাতে বাধ্য হলেও তার অবস্থান ছিল দৃঢ়। তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, "আমার বাবা মইনুদ্দিন মাস্টার দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। সেই মুক্তিযোদ্ধাদের মহানায়ক হলেন বঙ্গবন্ধু। তার ছবি টানানো কোনো অন্যায় নয়, এটা গর্বের বিষয়। আমি এই ছবি সরাবো না।"
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় কর্তৃপক্ষ তাকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয়।
এ ঘটনায় এলাকায় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এক পক্ষ বিষয়টিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং স্বাধীন মত প্রকাশের উপর হস্তক্ষেপ বলে মনে করছে। অন্যদিকে, আরেকটি পক্ষ ওই শিক্ষিকার সমালোচনা করছে। শিক্ষক সমাজেও এ নিয়ে বিভক্তি দেখা দিয়েছে; একাংশ এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও অন্য পক্ষ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষিকা শামীমা ইয়াসমিনের স্বামী হাফিজুর রহমান জানান, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ফোনে তার স্ত্রীকে অফিসে গিয়ে একটি চিঠি গ্রহণ করতে বলেছেন, তবে বরখাস্তের বিষয়টি সরাসরি উল্লেখ করেননি।
নেছারাবাদ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. খন্দকার জসিম আহমেদ বলেন, "গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে আমরা তদন্ত শুরু করি এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠাই। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তদন্ত এখনো চলছে। চূড়ান্ত তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা এমনকি স্থায়ী বহিষ্কারের মতো ব্যবস্থাও নেওয়া হতে পারে।"
What's Your Reaction?






