মধুখালীর ঘটনা নিয়ে ফরিদপুর জেলা পুলিশের প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত  

মানিক কুমার দাস, ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি:
Apr 24, 2024 - 00:09
 0  7
মধুখালীর ঘটনা নিয়ে ফরিদপুর জেলা পুলিশের প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত  

ফরিদপুর জেলা পুলিশের প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়েছে।মঙ্গলবার রাত ৯ টায় ‌ ফরিদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ‌মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গ্রামে বিচারবহির্ভূত নির্মম হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে

মধুখালীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ও এ ঘটনায় অপরাধী গ্রেফতার এবং সার্বিক আইন-শৃঙ্খলার সর্বশেষ পরিস্থিতি সংক্রান্তে এ প্রেস‌ ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন তথ্য প্রদান করেন ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোর্শেদ আলম। উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মোহাম্মদ সালাউদ্দিন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ ইমদাদ হোসাইন সহ ফরিদপুর জেলা পুলিশের কর্মকর্তা বৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রেস ব্রিফিং-এ জানানো হয় গত ১৮/০৪/২৪ ডূমাইন ইউনিঘনের কৃষ্ণনগর গ্রামের পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালনের মধ্যে, কালী মন্দিরে আগুন দেওয়াকে কেন্দ্র করে নির্মাণ শ্রমিক আশরাফুল (২১) ও আসাদুল (১৫) উভয় পিতা- শাহজাহান, গ্রাম- চোপের ঘাট, থানা- মধুখালী, 
জেলা- ফরিদপুর দ্বয়দের স্থানীয় হিন্দুরা ও অন্যান্য লোকজন নৃশংস ভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। 
এ ঘটনায় মধুখালী থানায় ১টি হত্যা মামলাসহ ৩টি মামলা রুজু হয়। পুলিশ ইতোমধ্যে ঘটনার সাথে জড়িত এপর্যন্ত ১২ জনকে ‌আটক করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করে। আটককৃত ২জন বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃকাঃবিঃ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেছে। অন্যান্য অপরাধীদেরকে আটকের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট ও আইন-শৃঙ্খলা অবনতি করার লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একদল দুষ্কৃতিকারী অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। উক্ত ঘটনায় পররবর্তীতে পুলিশ সুপারের দিক-নির্দেশনায় জেলার প্রতিটি থানায় সম্প্রীতি সমাবেশের আয়োজনের মাধ্যমে জনগনকে সচেতন করার লক্ষ্যে কাজ করে আসছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে অতিরিক্ত জনবল মোতায়ন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার সকাল অনুমানিক ৯ টায় মধুখালী থানাধীন মধুখালী রেলগেইট সংলগ্ন ঈদগাহ ময়দানে মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায় কর্তৃক বিচার বহির্ভূত নির্মম হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচী পালনের জন্য স্থানীয় অনুমান ১০০০/১৫০০ লোকজন জড়ো হয়ে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে। 
আস্তে আস্তে লোক সমাগম বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে তারা মধুখালী ঈদগাহ ময়দান হতে সকাল অনুমানিক ৯.৩৫ মিনিটের সময় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে চলে এসে মহাসড়কে পাশে দাড়িয়ে যায়, আস্তে আস্তে লোকজন বাড়তে থাকে এবং মহাসড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করেন। সংবাদ পেয়ে সহকারী পুলিশ সুপার, মধুখালী সার্কেল; অফিসার ইনচার্জ, মধুখালী থানা, অন্যান্য অফিসার-ফোর্স সহ উপস্থিত হয়ে তাদের নিবৃত করার চেষ্টা করে। মধুখালী থানার বিভিন্ন এলাকা হতে অনুমান ৪৫০০/৫০০০ জন মানববন্ধন কর্মসূচীতে যোগদান করে পুলিশের বাঁধা অমান্য করে মহাসড়ক যান চলাচল বন্ধ করে দিয়ে মহাসড়ক ধরে ডুমাইন এলাকার দিকে অগ্রসর হতে থাকে।
মানববন্ধনকারীরা মধুখালী থানা এলাকার ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মধুখালী বাজার, মরিচ বাজার, মালেকা চক্ষু হাসপাতাল, আড়কান্দি ব্রীজ, নওয়াপাড়া মোড়, বাগাট বাজার, ঘোপঘাট স্ট্যান্ড, মাঝিবাড়ি স্ট্যান্ডসহ মহাসড়কের প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করে নির্মাণ শ্রমিকদের হত্যার বিচারের দাবীতে বিক্ষোভ করতে থাকে। বিভিন্ন এলাকা হতে আরোও লোকজন সমাগম হতে শুরু করে।
উক্ত ঘটনায় পুলিশ সুপার, ফরিদপুর, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস সহ অতিরিক্ত অফিসার-ফোর্স নিয়ে মধুখালী উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যান। পুলিশ সুপার  পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত জনবল ও অফিসার মোতায়েন করেন। জেলা পুলিশের এসএএফ পুলিশ সদস্য, মধুখালী থানার পুলিশ সদস্য, সাদা পোষাকে ডিএসবি'র পুলিশ সদস্য, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যের পাশাপাশি রেঞ্জ থেকে আগত আরআরএফ পুলিশ সদস্য, এপিবিএন এর সদস্য এবং মাগুরা জেলা পুলিশ সদস্যদের পুলিশ সুপার, ফরিদপুর জনগনের জানমালের নিরাপত্তা ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মোতায়েন করেন।
আজ সকাল থেকে বিভিন্ন পয়েন্টে গিয়ে পুলিশ সুপার ফরিদপুর  মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম, পিপিএম মহোদয সমাবেশে উপস্থিত লোকদের সাথে মতবিনিময় করে ন্যায় বিচারের আশ্বাস দেন এবং অপরাধীদের গ্রেফতার অভিযান চলমান রয়েছে মর্মে জানান।
মানবন্ধন ও রাস্তা অবরোধে অংশগ্রহণকারী আনুমানিক ৮/১০ হাজার জন বিক্ষোভকারী মধুখালী বাজার, মরিচ বাজার, মালেকা চক্ষু হাসপাতাল, আড়কান্দি ব্রীজ, নওয়াপাড়া- মোড়, বাগাট বাজার, ঘোপঘাট স্ট্যান্ড, মাঝিবাড়ি স্ট্যান্ডসহ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে লোকজন জমায়েত হয়ে রাস্তায় বড় বড় গাছের গুঁড়ি, ইট ও বাঁশ এনে বেরিকেড দিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে।

বিক্ষোভকারীদের সুনির্দিষ্ট কোন দাবি এবং স্থান ছিল না। তারা বিক্ষিপ্ত অবস্থায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করছিল। কিছু কিছু স্থানে রাস্তায় টায়ারে ও গাছের গুড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। তাৎক্ষনিকভাবে পুলিশ উপস্থিত হয়ে রাস্তার বেরিকেড অপসারণসহ আগুন নিভিয়ে ফেলে। বিক্ষোভ
কারীরা পুলিককে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। একস্থানে সড়কের বেরিগেট অপসারণ করলে বিক্ষোভকারীরা অন্যস্থানে গিয়ে সড়ককে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। বিভিন্ন ইউনিট হতে আগত ডিউটিরত পুলিশ শটগান ও গ্যাসগানের ফায়ার করে রাস্তা হতে বিক্ষোভকারী ও বেরিকেড সরিয়ে দেয়। বেলা অনুমান ৩-৩৫ ঘটিকার সময় যান চলাচল স্বাভাবিক করে। পুলিশের হস্তক্ষেপে রাস্তা হতে মানববন্ধন
কারীরা সরে যায়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সকাল সাড়ে ১০ টা হতে দুপুর সাড়ে ৩ টা পর্যন্ত ফরিদপুর-মধুখালী-খুলনা রোডে যান চলাচল বন্ধ ছিল। বর্তমানে ফরিদপুর হতে খুলনাগামী সকল যান চলাচল স্বাভাবিক আছে।
উক্ত ঘটনায় পুলিশের সাথে উত্তেজিত জনতার ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় ১২ জন পুলিশ সদস্য ও ৩/৪ জন সাধারণ জনগন আহত হয়। আহতরা মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।
উল্লেখ্য যে, আজকের এই ঘটনায় কোন নিহতের ঘটনা ঘটেনি।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow