কালকিনির রমজানপুর স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতি: চারজনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

আলমাস বেপারী, কালকিনি প্রতিনিধি, মাদারীপুরঃ
Nov 25, 2025 - 13:19
 0  70
কালকিনির রমজানপুর স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতি: চারজনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

মাদারীপুরের কালকিনির উত্তর রমজানপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার (১৭ নভেম্বর) দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, মাদারীপুর এই মামলা দায়ের করে।

দুদক সূত্র জানায়, এনফোর্সমেন্ট ইউনিটের নথি নং— ইএন/মাদারীপুর/৪৯৬, তারিখ ১ জুলাই ২০২৫—এ প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২ জুলাই সকাল ১০টায় একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানের নেতৃত্ব দেন দুদকের মাদারীপুর কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক আখতারুজ্জামান।

তথ্য সংগ্রহ, জিজ্ঞাসাবাদ ও নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়—২০১৫ সালের ১৪ এপ্রিল বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি জাতীয় ও একটি আঞ্চলিক দৈনিকে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। আবেদন জমার শেষ তারিখ পর্যন্ত মাত্র চারজন প্রার্থী আবেদন করেন। পরবর্তীতে ১৫ অক্টোবর মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং পরীক্ষায় নিয়োগ কমিটির সব সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

মৌখিক পরীক্ষায় প্রথমে ৩ নম্বর ক্রমিকের প্রার্থী মো. রোকনুজ্জামানকে ১৫ নম্বর দিয়ে প্রথম ও সুপারিশকৃত করা হয় এবং তাতে ডিজির প্রতিনিধির স্বাক্ষরও ছিল। কিন্তু পরে ফলাফল পরিবর্তন করে রোকনুজ্জামানকে বাদ দিয়ে মো. সিপন খাঁন নামে আরেক প্রার্থীকে ১৫ নম্বর দিয়ে পুনরায় প্রথম ও সুপারিশকৃত দেখানো হয়। পরিবর্তিত ফলাফলে 'প্রথম ও সুপারিশপ্রাপ্ত' লেখা থাকলেও সেখানে ডিজির প্রতিনিধির স্বাক্ষর ছিল না, তবে ফলাফলের নিচে ১–৫ নম্বর ক্রমিকের সব সদস্য স্বাক্ষর করেন।

অভিযানকালে দুদক টিম নিয়োগসংক্রান্ত দুইটি মূল ফলাফল/উত্তরপত্র জব্দ করে। দুদক জানায়, সরকারি দায়িত্ব পালনে ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতারণা, অবৈধ সুবিধা গ্রহণ ও অন্যকে লাভবান করার পর্যাপ্ত প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। ৪ নম্বর আসামি সিপন খাঁন অবৈধ সুবিধার মাধ্যমে চাকরি লাভ করেন এবং ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ যোগদানের পর জুন ২০২৫ পর্যন্ত মোট ১১,৮০,৭৬৪ টাকা বেতন-ভাতা তোলেন।

দুদকের সহকারী পরিচালক আখতারুজ্জামান বাদী হয়ে মামলা নং–০৫, তারিখ ১৭/১১/২০২৫, দণ্ডবিধির ৪০৬/৪২০/১০৯ ধারাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭–এর ৫(২) ধারায় মামলা দায়ের করেন।

আসামিদের নাম:
১. মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম — ডিজির প্রতিনিধি
২. শহিদুল ইসলাম — তৎকালীন সভাপতি, উত্তর রমজানপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়
৩. রমনী কান্ত ভক্ত — প্রধান শিক্ষক, উত্তর রমজানপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়
৪. মো. সিপন খাঁন — নিয়োগপ্রাপ্ত চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী রোকনুজ্জামান বলেন,
“আমি বৈধভাবে প্রথম হয়ে চাকরি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু টাকার বিনিময়ে আমাকে বাদ দিয়ে অন্যজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমি এই অনিয়মে জড়িতদের কঠোর শাস্তি এবং আমার ন্যায্য চাকরিটি পুনরায় প্রদানের দাবি জানাচ্ছি।”

দুদকের মামলার পর এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি—স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনা হোক।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow