উখিয়া সীমান্তে বিজিবির শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান: ২ লাখ ৮০ হাজার ইয়াবা জব্দ

মাহমুদুল হাসান, ভ্রাম্যমান প্রতিনিধিঃ
Sep 10, 2025 - 16:41
 0  3
উখিয়া সীমান্তে বিজিবির শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান: ২ লাখ ৮০ হাজার ইয়াবা জব্দ

কক্সবাজারের উখিয়া সীমান্তে আবারও মাদক চোরাচালানের এক বিশাল চালান রুখে দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। মঙ্গলবার রাতে পরিচালিত এক শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে ২ লাখ ৮০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করা হয়েছে। তবে, অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত চোরাকারবারিরা মিয়ানমারের দিকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়, যা সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে থাকা অদৃশ্য শক্তি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।

বুধবার দুপুরে ৬৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন এই অভিযানের কথা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার রাতে বালুখালী সীমান্তের বিডি-২১ নম্বর পিলারের কাছে একদল চোরাকারবারিকে সীমান্ত অতিক্রম করতে দেখা যায়। বিজিবির বিশেষ টহল দল তাদের চ্যালেঞ্জ করলে ১০-১২ জনের দলটি দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোটা দেখিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে তারা পার্শ্ববর্তী খালে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরে মিয়ানমার সীমান্তে পালিয়ে যায়।

পরে ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়ে দুটি বড় প্যাকেটে সাদা পলিথিনে মোড়ানো ২ লাখ ৮০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। বিজিবি জানিয়েছে, পালিয়ে যাওয়া চোরাকারবারিদের মধ্যে ৬-৭ জনকে তারা পরিচিত অপরাধী হিসেবে শনাক্ত করতে পেরেছে এবং তাদের ধরতে গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।

এই বিপুল পরিমাণ ইয়াবা জব্দের ঘটনা সীমান্তে বিজিবির সাফল্যকে তুলে ধরলেও স্থানীয় পর্যায়ে জন্ম দিয়েছে গভীর উদ্বেগ ও প্রশ্ন। স্থানীয়দের মতে, উখিয়া-টেকনাফ সীমান্ত এখন দেশের প্রধান ইয়াবা প্রবেশদ্বারে পরিণত হয়েছে। মিয়ানমারের একাধিক কারখানা থেকে প্রতিনিয়ত ইয়াবার চালান বাংলাদেশে ঢুকছে। প্রায়ই বিপুল পরিমাণ মাদকসহ বাহকরা আটক হলেও মূল হোতারা বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, বছরের পর বছর ধরে একই প্রভাবশালী চক্র এই মাদক চোরাচালানের সাথে জড়িত। কিন্তু তাদের পেছনে থাকা অদৃশ্য শক্তির কারণে তারা আইনের আওতায় আসছে না। তাদের প্রশ্ন, কারা এই চোরাকারবারি সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রক? কাদের ছত্রছায়ায় তারা এতটা বেপরোয়া?

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, “চোরাকারবারিরা প্রতিনিয়ত তাদের কৌশল পাল্টাচ্ছে। আমরাও সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছি এবং আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। শুধু মাদক জব্দই নয়, এই চক্রের মূল হোতাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে আমাদের গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে।”

তবে স্থানীয়দের আশঙ্কা, যতদিন পর্যন্ত এই মাদক সাম্রাজ্যের নেপথ্যের কারিগরদের আইনের আওতায় আনা না যাবে, ততদিন সীমান্তে শুধু ইয়াবার প্যাকেট জব্দ করার মধ্যেই অভিযান সীমাবদ্ধ থেকে যাবে এবং এই মরণ নেশার আগ্রাসন ঠেকানো কঠিন হবে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow