শ্রমশক্তি রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাধা দালাল - প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস
শ্রমশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে দালালই সবচেয়ে বড় অন্তরায় বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, পুরো খাতটাই দালাল ও সিন্ডিকেটে বেষ্টিত থাকায় পদে পদে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এই অবস্থা থেকে মুক্তি না পেলে শ্রমশক্তি রপ্তানিতে টেকসই উন্নতি সম্ভব নয়।
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ও জাতীয় প্রবাসী দিবস-২০২৫ উপলক্ষে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে আটক বাংলাদেশি শ্রমিকদের মুক্তির প্রসঙ্গ টেনে ড. ইউনূস বলেন,
‘তারা অনেক কষ্ট করে বিদেশে গেছেন। আইন অমান্য করলে কী শাস্তি হতে পারে, সেটাও তারা জানতেন। তবুও দেশের স্বার্থে তারা আইন ভেঙেছেন। পরে আমরা সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের কাছে অনুরোধ করলে তারা শ্রমিকদের মুক্তি দেন।’
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, শ্রমশক্তি রপ্তানির পুরো প্রক্রিয়াই দালালনির্ভর হয়ে পড়েছে। এর ফলে বিদেশে যেতে ইচ্ছুক শ্রমিকরা প্রতারণা ও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। সরকার কার্যত এই প্রক্রিয়া থেকে অনেকটাই দূরে অবস্থান করছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
প্রবাসী ভোটার নিবন্ধনের অগ্রগতি তুলে ধরে তিনি জানান, ইতোমধ্যে সাড়ে চার লাখের বেশি প্রবাসী ভোটার নিবন্ধনের আওতায় এসেছেন।
ড. ইউনূস বলেন,
‘বিশ্বজুড়ে এখন তারুণ্যের অভাব। আর আমরা তারুণ্যের খনি। এটা সোনার চেয়েও দামি সম্পদ। এত বিপুল তরুণ জনশক্তি আর কোথাও নেই। সারা পৃথিবীকে আমাদের কাছে আসতেই হবে।’
মালয়েশিয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বাংলাদেশ সফরে এলে জানা যায়, মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ১৭ হাজার শ্রমিক মালয়েশিয়ায় যেতে পারেননি, যদিও তারা সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছিলেন। বিষয়টি জানালে আনোয়ার ইব্রাহিম শ্রমিকদের গ্রহণে সম্মতি দেন। পরবর্তীতে মালয়েশিয়া সফরে গিয়ে দেখা যায়, পুরো প্রক্রিয়াই দালাল ও সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে।
জাপান সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ড. ইউনূস বলেন,
‘ওরা আমাকে বলল, লোক দরকার। আমি বললাম, আমরা তো লোক নিয়ে বসে আছি। কত লাগবে বলেন। তারা জানাল, নেপাল থেকে ৭ হাজার লোক নিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে মাত্র ২ হাজার। এটা শুনে আমি অবাক হয়েছি।’
তিনি বলেন, জাপানের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয় বাংলাদেশ কত শ্রমিক দিতে পারবে। উত্তরে তিনি জানান, এক লাখ শ্রমিক দেওয়ার সক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে—শুধু ভাষা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারলে।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, জাপানের বহু শহরে ট্যাক্সি চলাচল বন্ধ, চালক নেই। মাইলের পর মাইল জমি পড়ে আছে অনাবাদি। সেগুলো চালু ও চাষাবাদের জন্য তারা বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিতে আগ্রহী।
অনুষ্ঠানে প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল প্রবাসীদের কল্যাণে অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানজুড়ে বক্তারা শ্রমশক্তি রপ্তানিতে দালালমুক্ত, স্বচ্ছ ও রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থার ওপর জোর দেন এবং প্রবাসীদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
What's Your Reaction?
অনলাইন ডেস্কঃ