বন্যহাতির হুমকিতে কাপ্তাই, পর্যটক ও বাসিন্দাদের সতর্কতা

রিপন মারমা, কাপ্তাই প্রতিনিধি, রাঙ্গামাটিঃ
Dec 21, 2025 - 14:54
Dec 21, 2025 - 16:10
 0  3
বন্যহাতির হুমকিতে কাপ্তাই, পর্যটক ও বাসিন্দাদের সতর্কতা

রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলায় বন্যহাতির আক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে। কখনো গভীর রাতে, আবার কখনো দিনের আলোতেই লোকালয়ে নেমে আসছে বন্য হাতির পাল। এতে দিনরাত আতঙ্কে সময় কাটাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ঝুঁকির মুখে পড়েছে যানবাহন চলাচলও—ভয়ে উদ্বিগ্ন চালকরাসহ পথচারীরা। শুধু সাধারণ মানুষ নয়, হাতির উপস্থিতিতে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারাও। প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে কাপ্তাই–আসামবস্তী সড়কে বন্য হাতির আনাগোনায় মানুষের স্বাভাবিক চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।

বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে কাপ্তাই উপজেলায় বন্যহাতির আক্রমণে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন। পাশাপাশি একাধিক বসতঘর ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। প্রাণহানি ঠেকাতে এবং স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাপ্তাই বন বিভাগ বেশ কিছু কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে সোলার ফেন্সিং সচল করা হয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ সড়কে রং দিয়ে সতর্কতা সংকেত ও সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে।

বন বিভাগ জানায়, কাপ্তাই–আসামবস্তী সড়ক ও কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন এলাকায় হাতির চলাচল সবচেয়ে বেশি। গত নভেম্বর মাসে একই দিনে মাত্র ১০ মিনিটের ব্যবধানে দুই নারী বন্যহাতির আক্রমণে নিহত হন। এর আগে বছরের শুরুতে আরও একজন ব্যক্তি প্রাণ হারান। মূলত সন্ধ্যার পর ও ভোরে হাতির পাল লোকালয় এবং প্রধান সড়কে নেমে আসায় এসব দুর্ঘটনা ঘটছে।

হাতিকে লোকালয় থেকে দূরে রাখতে কাপ্তাইয়ের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে প্রায় ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সোলার ফেন্সিং কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। সৌরবিদ্যুৎচালিত এই ফেন্সিংয়ে মৃদু বিদ্যুৎ প্রবাহ থাকে, যা হাতিকে আঘাত না করে ভয় দেখিয়ে বনে ফিরিয়ে দেয়। যান্ত্রিক ত্রুটি দূর করে বর্তমানে ফেন্সিংটি পুরোপুরি সচল রয়েছে, যা বনঘেঁষা বসতিগুলোর জন্য কার্যকর সুরক্ষা হিসেবে কাজ করছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আসামবস্তী–কাপ্তাই সড়কের রাইন্যাটুকুন এলাকা, প্রশান্তি পার্ক, সীতা পাহাড়, কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানের প্রবেশমুখ, নৌবাহিনী সড়ক, কামিল্লাছড়ি–আসামবস্তী, রাইখালি, কারিগর পাড়া, খন্তাকাটা ও ব্যাঙছড়ি এলাকার পাহাড়গুলোতে হাতির খাদ্য সংকট প্রকট। ফলে খাদ্যের সন্ধানে বন্য হাতির পাল বিভিন্ন পথ ধরে লোকালয় ও সড়কে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

কাপ্তাই একটি জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা হওয়ায় বহিরাগত পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্ব দিচ্ছে বন বিভাগ। যেসব স্থান দিয়ে নিয়মিত হাতি পারাপার হয়—এলিফ্যান্ট করিডোর—সেসব জায়গায় উজ্জ্বল রঙে সতর্কতা চিহ্ন আঁকা হয়েছে। কাপ্তাই–আসামবস্তী ও নৌবাহিনীর প্রধান সড়কের পিচঢালা অংশে বড় বড় অক্ষরে লেখা হয়েছে—‘সাবধান, হাতি চলাচলের পথ’। পাশাপাশি পর্যটকদের উদ্দেশ্যে মাইকিং করা হচ্ছে এবং লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। হাতি দেখলে হর্ন না বাজানো, ছবি তুলতে বা ফ্ল্যাশ ব্যবহার না করা এবং দ্রুত নিরাপদ স্থান ত্যাগ করার জন্য কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বনাঞ্চলের প্রবেশমুখ ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে নতুন বড় আকারের সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড।

কাপ্তাই রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক স্বাধীন বলেন, “মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। সোলার ফেন্সিং নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে। সড়কে রং দিয়ে চিহ্নিত করার ফলে চালকরাও এখন অনেক বেশি সচেতন। তবে পর্যটকদের বনের ভেতরে একা না যাওয়ার এবং নির্ধারিত নির্দেশনা মেনে চলার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।”

সংশ্লিষ্টদের মতে, পার্বত্য চট্টগ্রামের এই প্রাকৃতিক পরিবেশে হাতি ও মানুষের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে বন বিভাগের উদ্যোগের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সচেতনতাই এখন সবচেয়ে বড় প্রয়োজন।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow