খোলাহাটি বাণিজ্য মেলার আড়ালে রমরমা জুয়া: সর্বস্বান্ত সাধারণ মানুষ

মেসবাহ সৌরভ, নবাবগঞ্জ প্রতিনিধি, দিনাজপুরঃ
Oct 5, 2025 - 12:17
 0  4
খোলাহাটি বাণিজ্য মেলার আড়ালে রমরমা জুয়া: সর্বস্বান্ত সাধারণ মানুষ

দিনাজপুরের খোলাহাটি ও রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার সংযোগস্থলে আয়োজিত শিল্প ও বাণিজ্য মেলা এখন সাধারণ মানুষের বিনোদনের পরিবর্তে পরিণত হয়েছে এক বিশাল জুয়ার আসরে। ‘র‍্যাফেল ড্র’ বা আকর্ষণীয় লটারির নামে চলা এই অবৈধ জুয়ায় জড়িয়ে পড়ছে লাখো মানুষ, যার ফলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে নেমে এসেছে বিপর্যয় এবং আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড।

ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলার নামে শুরু হলেও এর মূল আকর্ষণ এখন র‌্যাফেল ড্র। অভিযোগ উঠেছে, প্রতিদিন প্রায় তিন শতাধিক অটোরিকশা ও রিকশায় করে রংপুর ও দিনাজপুরের বিভিন্ন উপজেলার হাট-বাজার এবং গ্রামের অলিগলিতে ২০ টাকা মূল্যের লটারির টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। এই টিকিট বিক্রির মাধ্যমে আয়োজকরা প্রতিদিন কোটি টাকার বেশি অর্থ সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে বলে জানা যায়। মধ্যরাতে এই লটারির ড্র অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে মোটরসাইকেল, স্বর্ণালঙ্কারসহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় পুরস্কারের লোভ দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রলুব্ধ করা হয়। এই ড্র স্থানীয় ডিশ চ্যানেলে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করে জুয়ার প্রচারণাকে আরও ব্যাপকতা দেওয়া হচ্ছে।

লটারির নামে চলা এই জুয়া শুধু আর্থিক ক্ষতিতেই সীমাবদ্ধ নেই। জেতার আশায় টাকা জোগাড় করতে গিয়ে এলাকায় চুরি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। অনেক পরিবারের কর্তা তাদের রোজগারের সম্পূর্ণ অর্থ লটারির পেছনে খরচ করে ফেলায় পরিবারে অশান্তি নেমে এসেছে।

এক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "শিশু-কিশোরেরাও এই মরণনেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। তারা পড়াশোনা বাদ দিয়ে লটারির টিকিট কেনার জন্য টাকা জোগাড় করতে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছে।" এটি সামাজিক অবক্ষয়ের একটি ভয়াবহ চিত্র বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

যদিও মেলা প্রাঙ্গণে প্রশাসনের নজরদারি রয়েছে, এই অবৈধ জুয়ার কারবার বন্ধে তাদের ভূমিকা যথেষ্ট নয় বলে অভিযোগ উঠেছে। বদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানিয়েছেন, এই মেলার জন্য কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি এবং অভিযোগের ভিত্তিতে বেশ কয়েকবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে কয়েকজনকে সাজা দেওয়া হয়েছে। রংপুরের জেলা প্রশাসকও মেলাটি অননুমোদিত বলে নিশ্চিত করেছেন।

তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব পদক্ষেপ সত্ত্বেও মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাওয়ায় জুয়ার রমরমা ব্যবসা বন্ধ হচ্ছে না। সম্প্রতি এই জুয়া বন্ধের দাবিতে স্থানীয় সচেতন নাগরিক সমাজ সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধের মতো কর্মসূচিও পালন করেছে।

সাধারণ মানুষের দাবি, প্রশাসন যেন অবিলম্বে এই অবৈধ জুয়ার আসর বন্ধ করে এবং মেলাকে তার প্রকৃত উদ্দেশ্য অর্থাৎ বাণিজ্য ও সুস্থ বিনোদনের কেন্দ্রে পরিণত করে। এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এই জুয়া চক্রকে ভেঙে দেওয়ার জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow