নির্বাচন কমিশনের স্থবিরতায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা, ভিসির সামনে বিক্ষোভ

মাসফিকুল হাসান, বেরোবি প্রতিনিধি, রংপুরঃ
Dec 23, 2025 - 23:36
 0  2
নির্বাচন কমিশনের স্থবিরতায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা, ভিসির সামনে বিক্ষোভ

‎বারবার তফসিল পরিবর্তন, প্রধান নির্বাচন কমিশনারদের একের পর এক পদত্যাগ এবং নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রমে স্থবিরতার কারণে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (ব্রাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন কার্যক্রম চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।

‎এ অবস্থায় ব্রাকসু নির্বাচনের তফসিল সচল ও নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলীর মুখোমুখি হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে জড়ো হয়ে বিভিন্ন স্লোগানে মুখর করে তোলেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা দ্রুত নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম পুনরায় শুরু এবং নির্দিষ্ট সময়ে ভোটগ্রহণের দাবি জানান।

‎তফসিল সচলদাবি করে এসএম আশিকুর রহমান বলেন, তফসিল অনুযায়ী আমাদের নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল জানুয়ারির ২১ তারিখ ।  আমাদের আন্দোলন তার প্রেক্ষাপট আগামীকাল খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে। আমাদের দাবি স্পষ্ট তফসিল অনুযায়ী ২১ তারিখের মধ্যে আমাদের নির্বাচন চাই। নতুন নির্বাচন কমিশনার ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট ডাকবে কিনা সেটা প্রশাসনের বিষয়। আমাদের দাবি স্পষ্ট একুশ তারিখের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে তা না হলে ক্যাম্পাস বন্ধের পরে ১০ তারিখ আমরা প্রশাসনের বিরুদ্ধে মাঠে নামব। 

‎শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলী বলেন, “ব্রাকসুর কার্যক্রম চালু করতে নির্বাচন কমিশনারদের আজই আমি চিঠি দেব। তারা যেন দ্রুত কার্যক্রম শুরু করেন, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা থাকবে।”

‎উল্লেখ্য, গত ২৮ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে শিক্ষার্থী সংসদ অন্তর্ভুক্ত হয়। এরপর ৪ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১৬তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় অধ্যাপক ড. ফেরদৌস রহমানকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করে ছয় সদস্য বিশিষ্ট ব্রাকসুর প্রথম নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। তবে কমিশন গঠনের একদিন পরই প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ নতুন করে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করে।

‎পরবর্তীতে ১১ নভেম্বর উপাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ১১৭তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শাহজামানকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করে কমিশন পুনর্গঠন করা হয়। কমিশন পুনর্গঠন হলেও দীর্ঘ সময় ধরে তাদের কার্যক্রমে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।

‎শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ১৮ নভেম্বর প্রথম দফায় ২৯ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণের ঘোষণা দিয়ে ব্রাকসুর প্রথম তফসিল প্রকাশ করা হয়। তবে মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে ভোটগ্রহণের তারিখ এগিয়ে এনে ২৪ ডিসেম্বর নির্ধারণ করে দ্বিতীয় তফসিল ঘোষণা করা হয়। এ সময় ২৫ নভেম্বর পুনর্গঠিত কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মো. শাহজামান প্রথমবার পদত্যাগপত্র জমা দিলেও প্রশাসনের অনুরোধে দায়িত্বে বহাল থাকেন।

‎এরপর ১ ডিসেম্বর ভোটার তালিকায় অসংগতি দেখিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব কার্যক্রম স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। পরে ৩ ডিসেম্বর রাতে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নতুন রোডম্যাপ অনুযায়ী সংশোধিত তৃতীয় তফসিল ঘোষণা করা হয়।

‎তফসিল অনুযায়ী প্রার্থীরা মনোনয়ন ফরম উত্তোলন, ডোপ টেস্টসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করলেও মনোনয়ন জমাদানের শেষ দিন ৯ ডিসেম্বর কোনো পূর্ব নোটিশ ছাড়াই নির্বাচন কমিশন কার্যালয় বন্ধ পাওয়া যায়। এতে চরম ভোগান্তি ও হতাশায় পড়েন প্রার্থীরা।

‎পরদিন ১০ ডিসেম্বর রাতে আবারও তফসিল পরিবর্তন করে ভোটগ্রহণের তারিখ পিছিয়ে আগামী বছরের ২১ জানুয়ারি নির্ধারণ করে চতুর্থ তফসিল ঘোষণা করা হয়। এর পরদিন ১১ ডিসেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মো. শাহজামান দ্বিতীয়বারের মতো পদত্যাগপত্র জমা দেন।

‎সর্বশেষ তফসিল অনুযায়ী ১৩ ডিসেম্বর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের কথা থাকলেও প্রধান নির্বাচন কমিশনার ব্যতীত বাকি পাঁচ কমিশনারের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা ও যোগাযোগের অভাবে আইনগত কারণে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ সম্ভব হয়নি।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow