রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ে প্রবারণা পূর্ণিমার বর্ণিল উৎসব শুরু

রিপন মারমা, কাপ্তাই প্রতিনিধি, রাঙ্গামাটিঃ
Oct 5, 2025 - 12:21
Oct 5, 2025 - 14:09
 0  11
রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ে প্রবারণা পূর্ণিমার বর্ণিল উৎসব শুরু

প্রদীপ প্রজ্বলন, ফানুস ওড়ানো এবং বর্ণাঢ্য রথযাত্রার মধ্য দিয়ে পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপনের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিবছরের মতো এবারও আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা তিথিকে ঘিরে এই উৎসবকে কেন্দ্র করে পাহাড়ের বৌদ্ধ বিহার এবং পাড়া-মহল্লায় বিরাজ করছে আনন্দঘন পরিবেশ। সোমবার (৬ অক্টোবর) থেকে দুই দিনব্যাপী এই উৎসব শুরু হতে যাচ্ছে।

মারমা ভাষায় 'ওয়াগ্যোয়াই' শব্দের অর্থ প্রবারণা পূর্ণিমা এবং 'পোয়ে' অর্থ উৎসব। এই উৎসব মূলত আত্মশুদ্ধি এবং অশুভকে বর্জন করে সত্য ও সুন্দরকে বরণের দিন। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, এই তিথিতেই রাজকুমার সিদ্ধার্থ মাতৃগর্ভে প্রবেশ, গৃহত্যাগ এবং ধর্মচক্র প্রবর্তন করেছিলেন। আষাঢ়ী পূর্ণিমার পর থেকে তিন মাসব্যাপী বর্ষাবাস পালন শেষে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা এই উৎসবে অংশ নেন।

উৎসবকে সামনে রেখে কাপ্তাইয়ের চিৎমরম, রাইখালী, হরিণছড়া, ব্যাঙছড়ি মারমা পাড়া, ওয়াগ্গার নোয়াপাড়া, সাপছড়ি তঞ্চঙ্গ্যা পাড়া, কুকিমারা, মুরালি পাড়া, শিলছড়ি, বারঘোনিয়া, রেশম বাগান ও মিতিংগ্যা ছড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। তরুণ-তরুণীরা রাত জেগে রং-বেরঙের কাগজের ফানুস তৈরি করছেন। বিহারগুলোকেও নানা রঙে এবং ময়ূরের আদলে তৈরি মঙ্গল রথ দিয়ে সাজানো হচ্ছে। প্রতিটি ঘরে ঘরে ঐতিহ্যবাহী পিঠাপুলি তৈরির প্রস্তুতিও চলছে।

সোমবার সকাল থেকে বিভিন্ন বিহারে ধর্মীয় প্রার্থনার মধ্য দিয়ে উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। দায়ক-দায়িকারা পঞ্চশীল, অষ্টশীল ও দশশীল গ্রহণের মাধ্যমে সকল প্রকার পাপ কাজ থেকে বিরত থাকার মন্ত্রে দীক্ষিত হবেন। দিনব্যাপী চলবে বুদ্ধমূর্তি স্নান, ভিক্ষুদের উদ্দেশ্যে অন্নদান, ফুল পূজা এবং জগতের সকল প্রাণীর মঙ্গল কামনায় বিশেষ প্রার্থনা। সন্ধ্যায় বিহার প্রাঙ্গণ থেকে আকাশে উড়ানো হবে শত শত রঙিন ফানুস। বৌদ্ধ বিশ্বাস অনুযায়ী, স্বর্গের 'চুলামনি চৈত্য'কে পূজা করার উদ্দেশ্যে এই আকাশ-প্রদীপ বা ফানুস ওড়ানো হয়।

উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ মঙ্গল রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) বিকেলে। ময়ূরের আদলে তৈরি সুসজ্জিত রথে গৌতম বুদ্ধের মূর্তি স্থাপন করে নারানগিরি থেকে জোগনাছড়ি এলাকা পর্যন্ত এক বর্ণাঢ্য র‍্যালি বের করা হবে, যা পরে মাঝি পাড়ায় এসে শেষ হবে। মধ্যরাতে কর্ণফুলী নদীতে এই রথটি বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দুই দিনব্যাপী উৎসবের সমাপ্তি ঘটবে।

বাংলাদেশ মারমা ঐক্য পরিষদের রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক উথোয়াইমং মারমা এবং বাংলাদেশ তঞ্চঙ্গ্যা কল্যাণ সংস্থার কাপ্তাই অঞ্চল সভাপতি অজিত কুমার তঞ্চঙ্গ্যা জানান, প্রবারণা হলো আত্মশুদ্ধি ও সত্যকে বরণের উৎসব। এই দিনে জগতের সকল প্রাণীর মঙ্গল কামনা করা হয়। উৎসবকে ঘিরে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে কেনাকাটার ধুম পড়েছে এবং সমগ্র পাহাড়ি অঞ্চলে এক উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow