পার্বত্য চট্টগ্রামের স্কুলে স্টারলিংক ইন্টারনেট: উন্নয়নের সুযোগ, নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের শঙ্কা
পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম এলাকার স্কুলগুলোতে প্রথমবারের মতো যুক্ত হতে যাচ্ছে বহুজাতিক স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান স্টারলিংকের সংযোগ। খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলার স্কুলগুলোতে এই সেবা চালুর লক্ষ্যে সম্প্রতি বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল) এবং তিনটি পার্বত্য জেলা পরিষদের মধ্যে পৃথক তিনটি চুক্তি সই হয়েছে।
বিএসসিএল জানায়, গত ২৭ নভেম্বর বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ কার্যালয়ে, ১২ নভেম্বর রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ কার্যালয়ে এবং ১১ নভেম্বর খাগড়াছড়ি সার্কিট হাউসে এসব চুক্তি সম্পন্ন হয়।
সংস্থাটি মনে করছে, স্টারলিংকের উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ চালুর মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা ই-লার্নিং, অনলাইন ক্লাস, ডিজিটাল কনটেন্ট এবং ভার্চুয়াল শিক্ষা কার্যক্রমে নিয়মিতভাবে অংশ নিতে পারবে। ভৌগোলিক বৈচিত্র্য ও যোগাযোগব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও দূরবর্তী এলাকার শিক্ষার্থীদের মূলধারার শিক্ষায় যুক্ত করার ক্ষেত্রে এটি এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বলে মনে করছে বিএসসিএল।
বিএসসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মুহাম্মদ ইমাদুর রহমান বলেন, “এই চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ি অঞ্চলের শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হলো। প্রযুক্তির সংযোজন শিক্ষার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং দক্ষ জনশক্তি গঠনে সহায়ক হবে।”
তবে স্টারলিংক স্থাপন নিয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, এ ধরনের স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট ব্যবস্থায় অত্যন্ত উচ্চগতির ও এনক্রিপটেড সংযোগ পাওয়া যায়, যা রাষ্ট্রীয় তদারকির প্রচলিত কাঠামোর বাইরে চলে যেতে পারে। পার্বত্য চট্টগ্রামের মতো স্পর্শকাতর এলাকায় ইউপিডিএফ, জেএসএস, কেএনএফসহ সক্রিয় সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলো এই প্রযুক্তির অপব্যবহার করে গোপন যোগাযোগ, অস্ত্র–অর্থ লেনদেন ও অপারেশনাল সমন্বয়সহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড আরও নিরাপদ ও কাঠামোবদ্ধভাবে পরিচালনা করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্টারলিংকের দ্রুত স্থাপনযোগ্য ও বহনযোগ্য সরঞ্জাম সীমান্তবর্তী দুর্গম এলাকায় বিদেশি গোয়েন্দা নজরদারি, তথ্য পাচার, সাইবার স্পাইং এবং রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। ফলে স্থানীয় নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি, শান্তিচুক্তির বাস্তবায়ন ব্যাহত হওয়া ও উন্নয়ন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
What's Your Reaction?
মোহাম্মদ কেফায়েত উল্লাহ, জেলা প্রতিনিধি, খাগড়াছড়িঃ