স্বপ্ন ছড়াচ্ছে ‘বারি লাউ–৪’: কাপ্তাইয়ে পাহাড়ি কৃষি গবেষণায় নতুন দিগন্ত

রিপন মারমা, কাপ্তাই প্রতিনিধি, রাঙ্গামাটিঃ
Dec 17, 2025 - 18:16
 0  7
স্বপ্ন ছড়াচ্ছে ‘বারি লাউ–৪’: কাপ্তাইয়ে পাহাড়ি কৃষি গবেষণায় নতুন দিগন্ত

উচ্চফলনশীল ও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ লাউয়ের নতুন জাত ‘বারি লাউ–৪’ চাষে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র। গবেষণা কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত প্রদর্শনী প্লটে এই জাতের বাম্পার ফলন শুধু গবেষক ও কৃষকদেরই নয়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকেও নতুন করে আশান্বিত করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই সাফল্য পাহাড়ি এলাকার কৃষকদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে।

১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রটি দীর্ঘদিন ধরেই পাহাড়ি কৃষকদের ‘বাতিঘর’ হিসেবে পরিচিত। এ পর্যন্ত কেন্দ্রটি ২১টি সবজি ও ফলের জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশের কৃষি খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার পাহাড়ি অঞ্চলে বিস্তারের লক্ষ্যে ‘বারি লাউ–৪’ জাতের প্রজনন বীজ উৎপাদন ও প্রদর্শনী চাষ শুরু করেন কেন্দ্রের কৃষিবিজ্ঞানীরা।

চলতি বছরের ৪ সেপ্টেম্বর থেকে গবেষণা কেন্দ্রের প্রায় ১ একর জমিতে এই জাতের লাউ চাষ করা হয়। বীজ বপনের মাত্র ৭০ দিনের মধ্যেই প্রতিটি গাছে ফলন আসতে শুরু করে। বর্তমানে গবেষণা কেন্দ্রজুড়ে সারি সারি লাউ গাছে ঝুলছে পরিপক্ব লাউ—যা নজর কেড়েছে দর্শনার্থীদেরও।

গবেষণা কেন্দ্র পরিদর্শনকালে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, পাহাড়ি অঞ্চলে সাধারণত লাউ চাষে ফলন কম হয় এবং রোগবালাইয়ের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। এসব সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যেই ‘বারি লাউ–৪’ নিয়ে পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করা হয়। তিনি জানান, এই জাতটি তাপসহনশীল এবং সারা বছর চাষযোগ্য। পার্বত্য অঞ্চলের জন্য এটি বিশেষভাবে উপযোগী।

তিনি আরও বলেন, ‘বারি লাউ–৪’ এর ফল গাঢ় সবুজ রঙের, গায়ে সাদাটে দাগ থাকে। প্রতিটি গাছে গড়ে ১০–১২টি ফল পাওয়া যায়। প্রতিটি ফলের গড় ওজন প্রায় ২.৫ কেজি। ফলের দৈর্ঘ্য ৪২–৪৫ সেন্টিমিটার এবং ব্যাস ১২–১৩ সেন্টিমিটার। চারা রোপণের ৭০–৮০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। জীবনকাল ১৩০–১৫০ দিন এবং হেক্টরপ্রতি ফলন ৮০–৮৫ টন পর্যন্ত হতে পারে। তাপসহনশীল হওয়ায় গ্রীষ্মকালেও এই জাত চাষ করে কৃষক লাভবান হতে পারবেন। বাংলাদেশের সব এলাকাতেই এই জাতের চাষ সম্ভব। ফাল্গুনের শেষ দিকে আগাম ফসল হিসেবে চাষ শুরু করে চৈত্রে বীজ বপন ও বৈশাখে চারা রোপণ করা যায়।

গবেষণা কেন্দ্রের এই সাফল্যকে মডেল হিসেবে ধরে শিগগিরই পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় ‘বারি লাউ–৪’ এর বীজ ও চাষাবাদের পদ্ধতি ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। এতে পাহাড়ি কৃষকরা নিজেদের পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাড়তি উৎপাদন বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবেও স্বাবলম্বী হতে পারবেন।

রাইখালী ইউনিয়নের জগনাছড়ি এলাকার কৃষক পাইসুইউ মারমা বলেন, “আমরা আগে লাউ চাষ করে তেমন লাভ করতে পারতাম না। কিন্তু রাইখালী গবেষণা কেন্দ্রের দেখানো পদ্ধতিতে ‘বারি লাউ–৪’ চাষ করলে আমাদের ভাগ্য বদলে যাবে। লাউগুলো দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি ফলনও অবিশ্বাস্য।” তিনি আরও জানান, গত মাসে গবেষণা কেন্দ্র থেকে বিনামূল্যে ‘বারি লাউ–৪’ এর বীজ ও সার নিয়ে এক বিঘা জমিতে চাষ করেছেন। বর্তমানে গাছগুলো ভালোভাবে বেড়ে উঠেছে এবং তিনি ভালো ফলনের আশাবাদী।

ছবির ক্যাপশন: রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে চাষ করা ‘বারি লাউ–৪’।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow