রাবিতে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ, আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন প্রার্থী

মো: গোলাম কিবরিয়া , জেলা প্রতিনিধি, রাজশাহী
Oct 5, 2025 - 00:50
 0  5
রাবিতে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ, আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন প্রার্থী

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়া এক প্রার্থী। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি। পাশাপাশি আইনি নোটিশও পাঠিয়েছেন উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারসহ কয়েকজন কর্মকর্তাকে।

অভিযোগকারী ওই প্রার্থীর নাম রাহাত ইসলাম (হৃদয়)। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। স্নাতকে সিজিপিএ ৩ দশমিক ৬৩ ও স্নাতকোত্তরে ৩ দশমিক ৮৬ পেয়ে উভয় পর্যায়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন রাহাত। কিন্তু তিনি মৌখিক পরীক্ষার (ভাইভা) জন্য মনোনীত হননি। তার অভিযোগ, পরীক্ষার আগে তাকে অর্থ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তিনি অর্থ দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে ভাইভার তালিকায় রাখা হয়নি।

এ ঘটনায় ২১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীবের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন রাহাত। অভিযোগের কপি তিনি ডাকযোগে পাঠান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টা ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর কাছে। অভিযোগের সঙ্গে নাট্যকলা বিভাগের চেয়ারম্যানের সঙ্গে নিয়োগ-সংক্রান্ত একটি কথোপকথনের অডিও রেকর্ডও সংযুক্ত করেন তিনি।

এরপর রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ নুরুল হুদার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি-কে আইনি নোটিশ পাঠান রাহাত।

আইনজীবী নুরুল হুদা বলেন, “২১ সেপ্টেম্বর আমার মক্কেল অভিযোগ করলেও এর কোনো অগ্রগতি হয়নি। তাই তদন্তপূর্বক নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি জানিয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে রিট দায়ের করা হবে।”

রাহাতের অভিযোগ, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা রক্ষা করা হয়নি। কিছু ব্যক্তি আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচনের চেষ্টা করেছেন। লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও নির্দিষ্ট বিষয়ও আগেই কিছু প্রার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করেন তিনি।

অভিযোগে রাহাত আরও উল্লেখ করেন, নাট্যকলা বিভাগের চেয়ারম্যান তাকে সরাসরি বলেছেন, “অর্থ ছাড়া চাকরি পাওয়ার কোনো বিকল্প নেই।” এ ছাড়া নিয়োগ বোর্ডে প্রথমে রাখা একজন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপককে বাদ দিয়ে অন্যজনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়—যা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বজনপ্রীতির ইঙ্গিত দেয় বলে তার দাবি।

এ বিষয়ে নাট্যকলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মীর মেহবুব আলম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “এটা সম্পূর্ণ মনগড়া। ২৩ জন প্রার্থী পরীক্ষা দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি প্রথম ১০ জনের মধ্যেও আসেননি। নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন হয়েছে।”

বিশেষজ্ঞ পরিবর্তনের বিষয়ে তিনি বলেন, “এটা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত, এতে আমার কোনো ভূমিকা নেই।” কথোপকথনের অডিও সম্পর্কে তিনি বলেন, “এখন তো এআই দিয়ে অনেক কিছু বানানো যায়। এটা ভিত্তিহীন।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, “অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগের সত্যতা যাচাই করা হবে। আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে—সেটাও যথাযথভাবে দেখা হবে।”

রাহাত ইসলাম জানিয়েছেন, সুষ্ঠু তদন্ত না হলে তিনি আদালতের শরণাপন্ন হবেন।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow