যুবদল আহ্বায়কের নেতৃত্বে পুলিশের গাড়িতেই যুবককে পেটালেন নেতাকর্মীরা

নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় পুলিশের গাড়ির ভেতরেই এক যুবককে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক ইসমাইল হোসেন ইলিয়াসের নেতৃত্বাধীন নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। রোববার (১৯ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে এবং থানা প্রাঙ্গণে এ ঘটনাটি ঘটে। ইতিমধ্যে ওই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার নলচিরা ইউনিয়নের লামছড়ি গ্রামের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাহাব উদ্দিন ও তার ভাই মারজান উদ্দিনকে একদল যুবক বেধড়ক মারধর করে। এ সময় তাদের দুটি ঘর ভাঙচুর করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুটের অভিযোগও পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে পুলিশ ৯৯৯-এ প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে দুই ভাইকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
পরে উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক ইসমাইল হোসেন ইলিয়াস তার অনুসারীদের নিয়ে হাসপাতালে হাজির হন। অভিযোগ রয়েছে, তার নেতৃত্বে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কয়েকজন কর্মী পুলিশের উপস্থিতিতেই মারজান উদ্দিনের ওপর হামলা চালায়। এ সময় তারা পুলিশের গাড়ির ভেতরেই মারজানকে পেটায় এবং তার শরীরের ব্যান্ডেজ খুলে ফেলে। পরে থানায় নেওয়ার সময়ও হামলার চেষ্টা চালানো হয়, এতে থানা প্রাঙ্গণে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে হেলাল উদ্দিন, ইমতিয়াজ, ফরিদ উদ্দিন, ওমর ফারুক, কোহিনুর বেগম, উম্মে কুলসুম, নাজিম উদ্দিন, মারজান উদ্দিন, সাইফুজ্জামান, শাহাব উদ্দিন ও মহিমা বেগম রয়েছেন। এদের মধ্যে দুইজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত হয় কয়েক দিন আগে এক বিয়ে অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে। স্থানীয় হেলাল মাঝি অভিযোগ করেন, শাহাব উদ্দিন তাদের মসজিদের হুজুরকে বিয়েতে দাওয়াত না দিয়ে অন্য গ্রামের হুজুর দিয়ে বিয়ে পড়ান। এ নিয়ে কথা বলতে গেলে উভয়ের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয় এবং পরবর্তীতে সংঘর্ষে রূপ নেয়।
এদিকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, হাতিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিনহাজুল আবেদীন যুবদল নেতাকে উদ্দেশ্য করে বলছেন, “আপনার মতো মানুষ যদি এভাবে করেন, তাহলে আমরা কীভাবে আইন প্রয়োগ করব?” একপর্যায়ে তিনি মাটিতে বসে প্রশ্ন তোলেন, “আমার সামনে আসামিকে মারধর করেন কীভাবে?”
উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের যুগ্ম আহ্বায়ক বাবর আজম বলেন, “যুবদল আহ্বায়ক ইলিয়াসের নেতৃত্বে এ হামলা হয়েছে। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আগে থেকেই নানা অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও শীর্ষ নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় কেউ কিছু বলে না।”
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে যুবদল আহ্বায়ক ইলিয়াস বলেন, “আমার উপস্থিতিতে কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। বরং আমি আমার কর্মীদের শান্ত থাকার নির্দেশ দিয়েছি। শাহাব উদ্দিন মূলত ছাত্রলীগের একজন লাঠিয়াল ছিল। সে ও তার লোকজনই প্রথমে হামলা চালায়।”
এ বিষয়ে জানতে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। জেলা যুবদলের আহ্বায়ক মঞ্জুরুল আজিম সুমন জানান, “ঘটনাটি সম্পর্কে আমি অবগত নই, তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।”
হাতিয়া থানার উপপরিদর্শক মিনহাজুল আবেদীন বলেন, “৯৯৯ থেকে খবর পেয়ে আমরা আহতদের উদ্ধার করি। হাসপাতালে চিকিৎসার পর থানায় আনার সময়ই পুলিশের গাড়িতে হামলা চালিয়ে মারজানকে মারধর করা হয়।”
হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আজমল হুদা বলেন, “ঘটনাটি দুই পক্ষের মধ্যে পূর্ববিরোধের জের ধরে সংঘটিত হয়েছে। উভয় পক্ষই মামলা করবে। এটি রাজনৈতিক কোনো বিষয় নয়।”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর স্থানীয়ভাবে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এলাকাবাসীর দাবি, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
What's Your Reaction?






