পাহাড়ের মাটিতে সোনা ফলাচ্ছেন লাকি তনচংগ্যা: কাপ্তাইয়ের ১২ একর জমিতে মিশ্র চাষে নজির

পাহাড়ি মাটির বুক চিরে সোনার ফসল ফলিয়ে পাহাড়ের নারীদের জন্য নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছেন লাকি তনচংগ্যা। রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্গা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এক পাহাড়ি গ্রামে ১২ একর জমিতে মিশ্র চাষ করে তিনি হয়ে উঠেছেন এক উজ্জ্বল উদাহরণ—কেবল সফল কৃষক নন, একজন পরিপূর্ণ নারী উদ্যোক্তা।
২০০৩ সাল থেকে শুরু করা এই যাত্রায় আম, কলা, কাঁঠাল, পেঁপে, ভুট্টা, শসা, বড়ইসহ নানা ফল-সবজির সমন্বয়ে সারাবছর ধরে চাষাবাদ করে তিনি পাহাড়ে সম্ভাবনার এক নতুন দুয়ার খুলেছেন। শুধু চাষাবাদেই নয়, গবাদিপশুর খামার, দুধ উৎপাদন এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির মাধ্যমে তিনি গড়ে তুলেছেন একটি পূর্ণাঙ্গ কৃষিভিত্তিক পরিবার-অর্থনীতি।
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্গা ইউনিয়নের ১০০ নম্বর মৌজায় হেডম্যান অরুন তালুকদারের সহধর্মিণী লাকি তনচংগ্যার এই উদ্যোগ এলাকার তরুণ তরুণীদের কাছে এক দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। তার সফলতা দেখে পাড়ার বেশ কয়েকজন যুবক-যুবতী তার পেছনে হেঁটে মিশ্র বাগান গড়ে তুলেছেন, যা উপজেলায় নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।
লাকি তনচংগ্যার খামারে বর্তমানে ৬ থেকে ৮ জন শ্রমিক কাজ করছেন, যাদের প্রতিদিন ৪০০ টাকা মজুরি দেওয়া হয়। এই কর্মসংস্থান পেয়ে এলাকার বেকারত্ব কমেছে এবং শ্রমিকরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে। এছাড়া তিনি কিছু যুবককে আত্মকর্মী হিসেবে গড়ে তুলেছেন, যারা এখন নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করছেন।
লাকি তনচংগ্যা জানান, “স্বামী পৈত্রিক সম্পদের ১২ একর জমিতে আমি ২২ বছর ধরে মিশ্র ফসল চাষ করছি। আম, কলা, কাঁঠাল, পেঁপে, ভূট্টা, শসা, লেবু, বড়ইসহ নানা রকম ফসল একসঙ্গে চাষ করে প্রতি বছর ভালো সাফল্য পাচ্ছি। এখান থেকে আমরা নিজেদের স্বাবলম্বী করতে পেরেছি, আর যারা এখানে কাজ করছে, তারাও আত্মকর্মী হয়েছে।”
১৯৭৭ সালে দুর্গম বিলাইছড়িতে জন্ম নেওয়া লাকি তনচংগ্যা ১৯৯৫ সালে কাপ্তাই উপজেলার হেডম্যান অরুন তালুকদারের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। প্রাথমিকভাবে ২০টি গরু নিয়ে গবাদিপশু পালন শুরু করলেও এখন তার খামার থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৫ থেকে ২০ লিটার দুধ উৎপাদন হচ্ছে। দুধ উৎপাদনে মনোযোগ দিয়ে বর্তমানে খামার থেকে ভালো আয়ের পাশাপাশি স্থানীয় দুধের চাহিদাও পূরণ করছেন।
লাকি তনচংগ্যার খামার ও বাগান দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন রামপাহাড় দেবতাছড়ি এলাকার জীবন তনচংগ্যা ও তার সহধর্মিণী। তারা জানান, “লাকি তনচংগ্যার দিক নির্দেশনায় আমরা ভালো কাজ করছি। এখানে কাজ করে আমাদের জীবনযাত্রার মানও উন্নত হয়েছে।”
কাপ্তাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান আহমেদ বলেন, “লাকি তনচংগ্যার উদ্যোগ অন্যদের জন্য মডেল। তার মতো উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে কৃষির সম্ভাবনা বাড়ছে এবং যুবসমাজের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে।”
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. এনামুল হক হাজারী বলেন, “দুধ উৎপাদন ও গবাদিপশু পালনে লাকি তনচংগ্যার খামার স্বাস্থ্যসম্মত ও আধুনিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হচ্ছে, যা প্রশংসনীয়।”
What's Your Reaction?






