বিয়ে না করে বন্ধুত্বেই জীবন কাটাচ্ছেন শ্যামল ও সারোয়ার

একই ছাদের নিচে দুই বন্ধু, এক ব্যবসা আর এক জীবনের গল্প। বয়স পেরিয়েছে অর্ধশতক, তবুও জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছেন একে অপরকে—বন্ধু হিসেবে। বিয়ে না করে বন্ধুত্বকেই জীবনের কেন্দ্র করে তুলেছেন মাগুরার মহম্মদপুরের শ্যামল দত্ত ও গোলাম সারোয়ার।
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বাবুখালী বাজারে গড়ে ওঠা এই দুই বন্ধুর বন্ধুত্ব আজ এলাকায় আলোচনার বিষয়। প্রায় তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে একসাথে পথচলা করছেন শ্যামল দত্ত (৫৬) ও মোঃ গোলাম সারোয়ার। তাঁদের এই বন্ধুত্বের গভীরতাই যেন বিবাহ নামক সামাজিক প্রতিষ্ঠাকে ছাপিয়ে গেছে। তাঁরা কেউই আজ পর্যন্ত বিয়ে করেননি।
শ্যামল দত্ত বাবুখালী ইউনিয়নের দাতিয়াদহ গ্রামের বাসিন্দা, পিতা মৃত চন্দ্র দত্তের দ্বিতীয় পুত্র। অপরদিকে গোলাম সারোয়ার বাঁশো গ্রামের বাসিন্দা, তিনি মৃত শাহজদ্দিন মোল্লার দ্বিতীয় পুত্র। ছোটবেলায় বাবুখালী আফতাব উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা ও খেলাধুলার মাধ্যমে ১৯৯৭-৯৮ সাল নাগাদ তাঁদের মধ্যে গড়ে ওঠে গভীর বন্ধুত্ব।
দুজনই জানান, যখন বিয়ের উপযুক্ত সময় এসেছিল, তখন বন্ধুত্ব ও জীবন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন তাঁরা। কেউই ব্যক্তিগতভাবে বিয়ে নিয়ে ভাবেননি। এখন তাঁদের মতে, সে সময় পেরিয়ে গেছে, এখন আর বিয়ের প্রয়োজনও অনুভব করেন না।
স্থানীয়দের মতে, দুই বন্ধুর সম্পর্ক এতটাই গভীর যে তাঁরা একে অপরের “জীবন-মরণের সাথী” হয়ে উঠেছেন। ধর্মের ভিন্নতা তাঁদের বন্ধুত্বে কখনোই প্রভাব ফেলেনি। ঈদ, পূজা কিংবা যে কোনো উৎসবে তাঁরা একে অপরের বাড়িতে যান, একসাথে খাওয়া-দাওয়া ও আনন্দ উদ্যাপন করেন।
শুধু বন্ধুত্ব নয়, তাঁরা একসঙ্গে গড়ে তুলেছেন “সেবা স্টোর” নামের একটি মুদি দোকান, যা এখন এলাকাবাসীর কাছে একটি আস্থার জায়গা। দোকানে শুধু মুদি সামগ্রী নয়, রয়েছে বিকাশ, নগদ ও অন্যান্য অনলাইন সেবা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত একসঙ্গেই ব্যবসা পরিচালনা করেন তাঁরা।
এই দুই বন্ধুর জীবনযাপন, মূল্যবোধ ও বন্ধুত্বের উদাহরণ স্থানীয়দের অনুপ্রাণিত করে। অনেকেই প্রতিদিন সেবা স্টোরে এসে তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন, গল্প করেন এবং প্রশংসা করেন এই অনন্য সম্পর্কের।
বন্ধুত্ব যে শুধু একে অপরের পাশে থাকার নাম নয়, বরং জীবনের পরম আস্থার জায়গাও হতে পারে—শ্যামল ও সারোয়ার যেন তারই এক জীবন্ত প্রমাণ।
What's Your Reaction?






