লামা শহর প্রতিরক্ষায় শুরু হচ্ছে সিসি ব্লক স্থাপন, নদীর গতিপথ পরিবর্তনের দাবি স্থানীয়দের

বান্দরবানের লামা শহরকে নদীভাঙন থেকে রক্ষায় ‘লামা শহর প্রতিরক্ষা প্রকল্প’ নামে প্রায় বিশ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ শুরু হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় মাতামুহুরী নদীর তীরে শহর লাগোয়া পশ্চিমাংশে মার্মাপাড়া থেকে উত্তরমুখী প্রায় ৯.৫০ মিটার দৈর্ঘ্যে সিসি ব্লক স্থাপন করা হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্পটির কাজ ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে শহরাঞ্চলে নদীভাঙন অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে আসবে। তবে এতে করে বন্যার ঝুঁকি পুরোপুরি কমবে না। বিশেষ করে পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা থেকেই যাবে শহর ও আশপাশের এলাকাগুলোর জন্য। লামা শহরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রকল্পটিকে দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গিতে পর্যালোচনা ও সম্প্রসারণের পরামর্শ দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
এর আগে ১৯৯৩ সালে বিএনপি সরকারের আমলে লামাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে লামা শহর ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলকে নদীভাঙন ও বন্যামুক্ত করতে মাতামুহুরী নদীর গতিপথ পরিবর্তনের একটি বৃহৎ প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার একাধিক প্রতিনিধি দল মাঠ পর্যবেক্ষণ করে বাস্তবায়নের সম্ভাব্যতা যাচাই করেন। তবে রাজনৈতিক পালাবদল এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় দীর্ঘসূত্রিতার মধ্যে পড়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের আগেই বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ফাইলচাপা পড়ে যায় লালফিতায়, কার্যত তার মৃত্যু ঘটে।
চার দশকে লামা শহর এবং পাশ্ববর্তী চকরিয়া উপজেলার বমুবিলছড়ি ইউনিয়নে তিনদিকে ব্যাপক ভাঙন হয়। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে শহরের ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, রাস্তা-ঘাট, সরকারি-বেসরকারি বহু স্থাপনা এবং সাধারণ মানুষের বাসস্থান ও জমিজমা। দুই বছর আগে লামা বাজার অংশে কয়েক শ মিটার এলাকাজুড়ে জিও ব্যাগ বসিয়ে কিছুটা ভাঙন ঠেকানো সম্ভব হলেও সেটি ছিল অস্থায়ী সমাধান।
চলতি বছর শুরু হতে যাওয়া সিসি ব্লক স্থাপন কাজটি লামাবাসীর জন্য একটি বড় আশা। এটি শহরের নির্দিষ্ট অংশকে ভাঙন থেকে রক্ষা করবে। কিন্তু শহর ও আশপাশের এলাকা এখনো পাহাড়ি ঢলের বন্যা থেকে মুক্ত নয়। বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, লামা শহর ও বমুবিলছড়ি ইউনিয়নকে স্থায়ীভাবে বন্যামুক্ত করতে হলে দুটি বড় উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। একটি হলো—প্রায় ৭ থেকে ৮ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মাতামুহুরী নদীর দুই পাড় উঁচু করে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও সিসি ব্লক স্থাপন। অপরটি হলো—সাবেক মহকুমা প্রশাসনিক এলাকার উত্তরে বমুখালের মুখ দিয়ে সাপমারা ঝিরি হয়ে সুখিয়া ভ্যালির ৫০০ মিটার অংশ কেটে নদীর গতিপথ সোজা করে দেওয়া।
দ্বিতীয় প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে নদীর প্রবাহ রীতিতে সামান্য পরিবর্তন এলেও উপকার হবে দীর্ঘমেয়াদে। এতে শহরের উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে প্রায় তিন কিলোমিটারজুড়ে একটি বিশাল লেক বা জলাধার গঠিত হবে। এই জলাধার বড় মৎস্য খামার ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে, যা লামা উপজেলার অর্থনীতিকে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।
স্থানীয়দের দাবি, লামা পৌর শহর ও পাশ্ববর্তী ইউনিয়নের কয়েক হাজার পরিবারকে নদীভাঙন ও বন্যা থেকে বাঁচাতে হলে কেবল সিসি ব্লক নয়, প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও নদীর গতিপথ পুনর্বিন্যাস। তারা আশা করছেন, সরকার ও নীতিনির্ধারকরা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়ে এলাকাবাসীর দুশ্চিন্তার স্থায়ী অবসান ঘটাবেন।
What's Your Reaction?






