ইরানে মার্কিন হামলা: পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর উপর ভয়াবহ আঘাত
স্থানীয় সময় শনিবার, ২১ জুন ২০২৫ — রাত ২টা ৩০ মিনিটে ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক কেন্দ্র লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পরিচালিত এক যৌথ হামলায় মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনার বিস্ফোরণ ঘটে।
হামলার লক্ষ্য ছিল ইরানের ফরডো, নাটান্জ এবং ইসমাফাহান এলাকার ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনা। মার্কিন বি-২ স্পিরিট স্টেলথ বোমারু বিমান ও সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় অত্যাধুনিক টোমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, যার সাহায্যে উচ্চ-নির্ভুলতায় পরিচালিত হয় এই আক্রমণ।
বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলা এই অভিযানে ব্যবহৃত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বিধ্বংসী অস্ত্র — ৩০,০০০ পাউন্ড ওজনের GBU‑57 “Massive Ordnance Penetrator” (MOP) বোমা। প্রতিটি লক্ষ্যবস্তুতে একাধিক MOP নিক্ষেপ করা হয়েছে, যার উদ্দেশ্য ছিল মাটির নিচে অবস্থিত পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর সম্পূর্ণ ধ্বংস সাধন।
এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউস জানায়, এই হামলা ছিল “সুনির্দিষ্ট ও সফল”। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (যিনি ২০২৫ সালের নির্বাচনে ফের নির্বাচিত হন) একে “সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত” বলে আখ্যা দেন। তবে হামলার বৈধতা নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরে শুরু হয়েছে ব্যাপক বিতর্ক। অনেকেই বলছেন, এই হামলা কংগ্রেসীয় অনুমোদন ছাড়াই পরিচালিত হয়েছে।
ইরান হামলাকে “আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন” হিসেবে চিহ্নিত করে তীব্র প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, “এই পরিস্থিতি এক ভয়াবহ ও বিপজ্জনক মোড় নিয়েছে। অবিলম্বে উভয় পক্ষকে সংযত হতে হবে।” রাশিয়া, চীনসহ বিভিন্ন দেশ এই হামলার তীব্র সমালোচনা করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগুলোও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি শুধু ইরান নয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে চরমভাবে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ড. আমির জাফারি বলেন, “যদি ইরান পাল্টা জবাব দেয়, তাহলে এই সংকট দ্রুত একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ-এ রূপ নিতে পারে।” মার্কিন কংগ্রেসে ইতিমধ্যে বিরোধী ডেমোক্র্যাট নেতারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তকে “একপক্ষীয় যুদ্ধ ঘোষণা” হিসেবে অভিহিত করেছেন।
এই পরিস্থিতিতে অনেকেই আশঙ্কা করছেন, বিশ্ব তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে কিনা। বিশ্ব যখন শান্তি ও কূটনৈতিক সমাধানের পক্ষে কথা বলছে, তখন এ ধরনের আগ্রাসী পদক্ষেপ বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য এক গুরুতর হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
What's Your Reaction?






