‘রাগ উঠে গিয়েছিল’—মারধরের দায় স্বীকার ছাত্রদল নেতার

আলী আকবর শুভ, কুবি প্রতিনিধি, কুমিল্লাঃ
Jul 5, 2025 - 12:59
Jul 5, 2025 - 13:44
 0  82
‘রাগ উঠে গিয়েছিল’—মারধরের দায় স্বীকার ছাত্রদল নেতার

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) চাকরিতে যোগদানের দিনেই এক কর্মচারীকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে কুবি শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে। গত ৩ জুলাই বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে ঢুকেই পেটানো শুরু করেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, বিএনপিপন্থি এক শিক্ষক ও এক কর্মকর্তাকে অর্থ দিয়ে চাকরি না পাওয়ায় তাদের ইন্ধনে এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন। 

ভুক্তভোগী কর্মচারী সম্প্রতি প্রশাসনিক ভাবে রেজিস্ট্রার দপ্তরে কার্য সহকারী পদে নিয়োগ পান এবং ৩ জুলাই ছিল তার যোগদান দিবস। 

অভিযুক্ত মেহেদী হাসান বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মচারী পদ হিসাব রক্ষক পদে আবেদন করেছিলেন। বর্তমানে আইএফআইসি ব্যাংকে কর্মরত আছেন। তিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে কমিটিতে রয়েছেন। এছাড়াও তিনি সদস্য সচিব মুস্তাফিজুর রহমান শুভর পক্ষের রাজনীতি করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ওইদিন সকালে অভিযুক্ত ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক মেহেদী হাসান সকালে ভুক্তভোগীকে কল দিয়ে ছাত্রদলের পরিচয় দিয়ে দেন এবং দেখা করার কথা বলেন। ভুক্তভোগী দেখা করবেন বলে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ব্যস্ততার কারণে আর দেখা করতে পারেন নি। ঐ দিন বিকেলে প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করেন "তুই আজাদ?"। ভুক্তভোগী হ্যাঁ বলার সাথে সাথে প্রকাশ্যে পেটানো শুরু করেন।  এসময় সেখানে ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আবুল বাশার উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায়। জানা যায়, ভুক্তভোগী তাকে চিনতেন না। তাকে কেন মারা হয়েছে তাও তা তিনি জানেন না। 

সেসময় ভুক্তভোগীকে মেরে বের হয়ে যান অভিযুক্ত হাসান। অফিস শেষে বাড়িতে ফেরার সময় আবারো ক্যাম্পাস গেটের বাহিরে তাকে আটকে রাখেন অভিযুক্ত হাসান সোহাগ ও তার সাথের লোকজন। 

তবে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, বিএনপিপন্থী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভয়ে তিনি মুখ খুলতে রাজি হননি।

অভিযোগ ও মারধরের বিষয় স্বীকার করে করেন অভিযুক্ত মেহেদী হাসান। ছাত্রত্ব না থাকা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে প্রবেশ করে কর্মকর্তাকে মারার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমি তাকে কল দিয়েছিলাম যে সে আমার সাথে দেখা করে। সে প্রথমে কল ধরে আমাকে মিথ্যা বলে কিন্তু পরবর্তীতে কল দিলে আর পাওয়া যায়নি। সে মোবাইল বন্ধ করে রেখেছিলো। তাই আমার রাগ উঠে যায়। পরে রেজিস্ট্রার দপ্তরে তারে খোঁজে পাই। সেখানে রাগের মাথায় তাকে থাপ্পড় মারি।'

গুঞ্জন রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি পন্থী শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের নির্দেশে দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ বাণিজ্য করে আসছেন ছাত্রদলের এই নেতা। উক্ত পদ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে হয়েছে অর্থ লেনদেন। কিন্তু ঐ প্রার্থী চাকরি না পাওয়ায় এমন ঘটনা ঘটান। ছাত্রদলের কতিপয় নেতাকর্মীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ছাত্রদলের পাওয়ারে নিয়মিত প্রশাসনিক ভবনে বিভিন্ন জনের চাকরির জন্য তদবির করছেন তিনি। এছাড়াও ছাত্রদল ও এলাকার ক্ষমতা দেখিয়ে প্রভাব বিস্তার করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। 

স্থানীয় বিএনপির কয়েকজন নেতা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজনের কর্মকর্তার কথা শুনে মামলা করে এই নিয়োগ আটকে দেওয়া চেষ্টা চেয়েছিলেন। তখন আমরা বলেছি এই সরকার তো বেশি দিন থাকবে না। পরে সে আর মামলা করেনি।

কর্মচারীকে মারার বিষয়ে ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আতিকুর বলেন, ঘটনাটি আমি জানতাম না। তবে এমন ঘটনা ঘটে থাকলে অবশ্যই আমরা সাংগঠনিকভাবে পদক্ষেপ নিবো। এটি আমাদের আদর্শের সাথে যায় না। যথাযথ প্রমাণ পেলে প্রয়োজনে আমরা আইনি পদক্ষেপ নিবো।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাঈম ভূঁইয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মচারী হোক কিংবা কর্মকর্তা, কারওই গায়ে হাত দেওয়ার অধিকার নেই। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও মূল্যবোধের পরিপন্থী। এমন অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত দ্রুত ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

ছাত্রদলের সদস্য সচিব মুস্তাফিজুর রহমান শুভর অনুসারীর এমন কর্মকান্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, এই ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। 
 
কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারন সম্পাদক নাসির উদ্দীন বলেন, "এমন ঘটনা অপ্রত্যাশীত। তবে এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।  বিষয়টি আমি প্রেসিডেন্টকে জানাবো।"

এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ঐ ভুক্তভোগী আমাকে ফোন করে বিষয়টি জানিয়েছেন। আমি প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ জানাতে বলেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

উল্লেখ্য, এছাড়াও সম্প্রতি ছাত্রদল কর্তৃক সাংবাদিকদের উপর হামলা হলেও তার বিচার এখনো হয়নি।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow