মাদক গ্রহণের অপরাধে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীকে হলে আশ্রয় দিলেন সমন্বয়ক ফাহিম

মাদক গ্রহণের অপরাধে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীকে আবাসিক হলে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সমন্বয়ক ফাহিম আবরারের বিরুদ্ধে। আবাসিক শিক্ষার্থীরা বলছেন, সমন্বয়কের ক্ষমতায় বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীকে তিনি আশ্রয় দিয়েছেন। এ ঘটনায় প্রশাসনিক আইনে অভিযুক্ত ফাহিম আবরারকে শোকজ করার কথা জানিয়েছেন হল প্রভোস্ট।
জানা যায়, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় মাঠ থেকে মাদক সেবনরত অবস্থায় সাইদ উদ্দিন আহমেদ আটক করে প্রক্টোরিয়াল বডি। ২৮ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় তাকে এক বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয় এবং এক বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ ও আবাসিক হলে অবস্থানের উপরও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। তবে এই বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীকে কাজী নজরুল ইসলাম হলে আশ্রয় দিয়েছেন ফাহিম আবরার। হলে প্রবেশ নিষিদ্ধ হলেও নিয়মিত ফাহিম আবরারের কক্ষে থাকতেন বহিষ্কার হওয়া ঐ শিক্ষার্থী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থী সাইদ উদ্দিনকে অভিযুক্ত ফাহিম আবরারের কক্ষে রাখার বিষয়ে হলের মেসেঞ্জার গ্রুপে প্রশ্ন তুলেন অন্যান্য আবাসিক শিক্ষার্থীরা। এসময় তিনি নিজের ক্ষমতাবলে রেখেছেন বলে জানান৷
প্রতিবেদকের কাছে আসা একটি স্ক্রিনশটে দেখা যায়, এক শিক্ষার্থী গ্রুপে জিজ্ঞেস করেন "একজন বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থীকে হলে রাখা কতটা যৌক্তিক? যারা হলে রাখছেন তারা কিসের ভিত্তিতে রাখছেন।" এই মেসেজের রিপ্লাইয়ে ফাহিম আবরার লেখেন, " হেডমের ভিত্তিতে রাখছি। বা ল ডা ছিড়িস"।
হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে, সমন্বয়কের ক্ষমতাবলে মাদককান্ডে বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থীকে নিজ কক্ষে আশ্রয় দিয়েছেন ফাহিম আবরার। এছাড়াও শিক্ষার্থীরা বলছেন, তিনি মাদকের সাথে জড়িত থাকার কারণে ঐ কাজে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীকে হলে আশ্রয় দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে কয়েকজন আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, এটা শুধু নিয়ম ভঙ্গ নয়, এটা হল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো এবং প্রশাসনিক কাঠামোর উপর সরাসরি আঘাত। বহিষ্কৃত আরেক মাদকসেবীকে নিজের কক্ষে আশ্রয় দেওয়া স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে তিনি শুধু মাদকদ্রব্য সংশ্লিষ্টতা লুকাচ্ছেন না বরং একটি অসুস্থ সংস্কৃতি পৃষ্ঠপোষকতা করছেন। প্রশাসনের উচিত তার এমন আচরণের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া।
এদিকে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী সাইদ উদ্দিন গতকাল রাতে ফের হলে আসলে তাকে এবং আরো দুই শিক্ষার্থীকে মাদক নিয়ে আটক করে হল প্রভোস্ট। এসময়, তাদের রুম থেকে গাঁজা ও বুলেট উদ্ধার করা হয়। বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী বারবার হলে থাকাকে হল প্রশাসনের দুর্বলতা বলছেন শিক্ষার্থীরা। তারা জানান, পূর্বে একাধিকবার হল প্রভোস্টকে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীকে হলে আশ্রয় দেওয়ার কথা জানালেও তিনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। গতকালকের ঘটনায় হল প্রভোস্টকে প্রশ্ন করলে হল প্রভোস্ট ফাহিম আবরারকে শোকজ করার কথা জানান।
আবাসিক শিক্ষার্থী সোহান বলেন, সাইদ উদ্দিনকে মাদক সেবনের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক বহিষ্কার করা হয়েছিল। তবে বহিষ্কারের পরও তিনি হলে অবস্থান করতে থাকেন। শুনেছ নজরুল হলের একজন আবাসিক শিক্ষার্থী ফাহিম আবরার ও রবিন মিয়া তাকে হলে আশ্রয় দিয়েছেন। ফাহিম আবরারের দেখাদেখি আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী সাইদ উদ্দিনকে আশ্রয় দিয়ে তার অবস্থানকে সহায়তা করেছেন।
তিনি আরো বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো টলারেন্স থাকা সত্ত্বেও মাদকাসক্ত শিক্ষার্থীর পক্ষ নেওয়া মাদকের পক্ষ নেওয়া একই কথা। হল প্রশাসনের ব্যর্থতার কারণে নজরুল হল মাদক সংশ্লিষ্ট ঘটনায় সংবাদ শিরোনাম হয়ে উঠেছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। এরপরেও যারা হলে অবস্থানরত মাদকাসক্ত আছেন তাদের ডোপটেস্টের আওতায় আনার জন্য অনুরোধ করছি।
মাদককান্ডে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীকে হলে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে জানতে ফাহিম আবরারকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
প্রভোস্ট মো. হারুন জানান, আমরা তাকে নোটিশ পাঠাবো। তারপর বিষয়গুলো নিয়ে তদন্ত করে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
What's Your Reaction?






