আলোচিত চাঁদাবাজ রিয়াদের বাসা থেকে কোটি টাকার চেক ও এফডিআর উদ্ধার

চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদের বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থের চেক ও ফিক্সড ডিপোজিট রসিদের (এফডিআর) কাগজ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার রাতে রিয়াদের নাখালপাড়ার বাসায় চালানো এক অভিযানে দুই কোটি ২৫ লাখ টাকার চেক এবং প্রায় ২০ লাখ টাকার এফডিআর নথি পাওয়া যায়।
রাজধানীর গুলশানে সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে রিয়াদসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে তারা সাত দিনের রিমান্ডে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) হেফাজতে আছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে বলে ডিবি জানিয়েছে।
অভিযানের চাঞ্চল্যকর তথ্য:
পুলিশের সূত্র অনুযায়ী, উদ্ধার হওয়া দুই কোটি ২৫ লাখ টাকার চেকটি আগামী মাসের ২ তারিখে ক্যাশ হওয়ার কথা ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, গুলশানে একজন ব্যবসায়ীর জমি উদ্ধারের জন্য ৫ কোটি টাকার চুক্তির অংশ হিসেবে এই চেকটি রিয়াদের কাছে ছিল। তার বাসা থেকে প্রায় ১০টি এফডিআরের কাগজও উদ্ধার করা হয়েছে, যার প্রতিটিতে দুই লাখ টাকা করে জমা রয়েছে। এছাড়া, গত কয়েক মাসে রিয়াদের একটি বেসরকারি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা লেনদেনের প্রমাণও পেয়েছে পুলিশ।
মামলার প্রেক্ষাপট ও তদন্ত:
শাম্মী আহমেদের স্বামী সিদ্দিক আবু জাফর বাদী হয়ে গুলশান থানায় রিয়াদসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ১৭ জুলাই রিয়াদ ও কাজী গৌরব ওরফে অপু নিজেদের 'সমন্বয়ক' পরিচয় দিয়ে শাম্মী আহমেদের বাসায় যান এবং পলাতক আসামি আছে বলে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ বাসায় কোনো আসামি না পেয়ে ফিরে গেলেও, এই ঘটনাকে ব্যবহার করে রিয়াদ ও তার সহযোগীরা আবু জাফরকে ভয় দেখিয়ে ৫০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার দাবি করে। আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে গ্রেপ্তারের হুমকি দিলে, আবু জাফর তাদের ১০ লাখ টাকা দেন। এরপর গত ২৬ জুলাই রিয়াদের নেতৃত্বে আসামিরা পুনরায় বাকি ৪০ লাখ টাকা দাবি করতে গেলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে রিয়াদসহ পাঁচজনকে আটক করে।
অন্যান্য অভিযোগ ও প্রতিক্রিয়া:
রিয়াদের গ্রেপ্তারের পর গুলশান, বাড্ডা ও বনানী এলাকা থেকে আরও অনেকে তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ নিয়ে আসছেন। এদিকে, রিয়াদের সংগঠন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, এই ঘটনার পর তাদের ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়কসহ তিনজনকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে এবং কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া সারা দেশের সকল কমিটি স্থগিত ঘোষণা করেছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জানিয়েছে, রিয়াদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তারা বিষয়টি অনুসন্ধান করবে। নোয়াখালীতে রিয়াদের গ্রামের বাড়িতে তার অস্বচ্ছল পরিবারের পক্ষ থেকে সম্প্রতি একটি নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
What's Your Reaction?






