প্রতিবন্ধী কিশোরকে থাপ্পর দেওয়ায় স্বজনদের মারধরে মসজিদ কমিটির সভাপতি নিহত

এম নুরউদ্দিন আহমেদ,নরসিংদী জেলা প্রতিনিধি
Apr 6, 2024 - 18:37
 0  5
প্রতিবন্ধী কিশোরকে থাপ্পর দেওয়ায় স্বজনদের মারধরে মসজিদ কমিটির সভাপতি নিহত

নরসিংদীর রায়পুরায় ১৫ বছর বয়সী শারীরিক ও বাক প্রতিবন্ধী কিশোরকে থাপ্পর দেওয়ায় স্বজনদের মারধরে স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তির নাম চাঁন মিয়া (৬৮)। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন রায়পুরা থানা পুলিশ। 

এর আগে শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে রায়পুরা উপজেলার মরজাল ইউনিয়নের শিমুলতলী গ্রামে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। নিহত চাঁন মিয়া একই এলাকার মৃত রহম আলীর ছেলে ও স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। 

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার দুপুরে জুম্মার নামাজ আদায় করতে চাঁন মিয়া ওই মসজিদে গিয়েছিলেন। নামাজ শেষে দুপুর ২টার দিকে কয়েকজন মিলে মসজিদের ভেতরে বসে দানবাক্সে জমা পড়া টাকা গণনা করছিলেন। ওই সময় স্বাধীন নামের শারীরিক ও বাক প্রতিবন্ধী এক কিশোর মসজিদের বারান্দায় অবস্থান করে উচ্চস্বরে চেঁচাচ্ছিল। এতে খুবই বিরক্ত হন চাঁন মিয়া এবং উঠে তার কাছে গিয়ে একটি চড় মারেন। এ সময় ধমক দিয়ে তাকে বাড়ি চলে যেতে বলেন। কান্নারত অবস্থায় ওই কিশোর বাড়িতে গিয়ে তার দুই মামা সোহেল মিয়া ও জামাল মিয়াকে ইশারা-ইঙ্গিতে ঘটনা জানান। 

এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সোহেল ও জামাল আরও লোকজন সঙ্গে নিয়ে ওই মসজিদে আসেন এবং চাঁন মিয়ার কাছে ভাগিনা স্বাধীনকে চড় মারার কারণ জানতে চান। এক কথা, দুই কথায় তাদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়। একপর্যায়ে উত্তেজিত অবস্থায় কেউ একজন চাঁন মিয়ার মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে বসেন। এতে তাঁর মাথা ফেটে গিয়ে রক্তাক্ত জখম হয়। এ সময় তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাকে উদ্ধার  করে মুসল্লিরা রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। হাসপাতালটির জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় রেফার্ড করেন। অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। 

জানতে চাইলে মরজাল ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, স্থানীয় একজন প্রতিবন্ধী কিশোরকে শাসন করায় তার স্বজনরা উত্তেজনার বশে এলাকার বয়োজেষ্ঠ্য ব্যক্তি ও মসজিদ কমিটির সভাপতি চাঁন মিয়াকে হত্যা করেছেন। তাঁর মৃত্যুর খবর জানতে পেরে থানার ওসিসহ পুলিশের একাধিক দল রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন। বর্তমানে তাঁর লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা আছে। তাঁর স্বজনরাও সেখানে রয়েছেন।

রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাফায়েত হোসেন জানান, গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঢামেক ফাঁড়ির পুলিশের মাধ্যমে আমরা ঘটনাটি প্রথম জানতে পারি। গতকাল রাতেই আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও নিহত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার বিস্তারিত জেনেছি। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা বাড়িঘরে তালা মেরে পালিয়ে গেছেন। তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।   
তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, ময়নাতদন্ত শেষে লাশ হস্তান্তরের পর বাড়িতে ফিরে তারা মামলা করতে আসবেন।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow