মোড়ক পাল্টে রাজশাহীতে অবাধে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ কীটনাশক

মো: গোলাম কিবরিয়া , জেলা প্রতিনিধি, রাজশাহীঃ
Aug 5, 2025 - 17:47
 0  2
মোড়ক পাল্টে রাজশাহীতে অবাধে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ কীটনাশক

রাজশাহীর বাজারগুলোতে এক ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে, যেখানে সরকারিভাবে নিষিদ্ধ এবং মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর কীটনাশক বিক্রি হচ্ছে অবাধে। একটি বেসরকারি গবেষণা বলছে, এসব বিষাক্ত ওষুধ প্রায়শই মোড়ক পাল্টে বিক্রি করায় সাধারণ কৃষকরা এর ভয়াবহতা সম্পর্কে থাকছেন অন্ধকারে, আর এর ব্যবহারে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন ৬৮ শতাংশ ব্যবহারকারী। প্রশাসনের কার্যকর নজরদারির অভাবেই এই নীরব ঘাতকের বাণিজ্য চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সম্প্রতি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজিনাস নলেজ (বারসিক) পরিচালিত "জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব" শীর্ষক এক মাঠ সমীক্ষায় এই উদ্বেগজনক চিত্র উন্মোচিত হয়েছে। রাজশাহীর আটটি উপজেলার ১৯টি কৃষিপ্রধান গ্রামে এই গবেষণা চালানো হয়।

সমীক্ষা অনুযায়ী, রাজশাহীর ৯৯ শতাংশ কীটনাশকের দোকানেই নিয়মিত বিক্রি হচ্ছে এসব নিষিদ্ধ ও বিষাক্ত পণ্য। আরও আশঙ্কার বিষয় হলো, ৯৩.৩৭ শতাংশ ব্যবহারকারীই জানেন না যে তারা যে ওষুধটি ব্যবহার করছেন, তা শুধু নিষিদ্ধই নয়, মানবদেহ ও পরিবেশের জন্যও চরম বিপজ্জনক।

গবেষণায় দেশ-বিদেশে নিষিদ্ধ এমন বেশ কয়েকটি কীটনাশকের নাম উঠে এসেছে, যা রাজশাহীর বাজারে সহজলভ্য। এর মধ্যে রয়েছে: জিরো হার্ব-২০ এসএল (প্যারাকোয়াট), ফুরাডান ৫জি (কার্বারাইল), গ্যাস ট্যাবলেট (অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড), এবং কার্বোফোরান-৩ জিএসআই (কার্বোফোরান)

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসবের মধ্যে প্যারাকোয়াট সবচেয়ে বিপজ্জনক। এটি আগাছা দমনে ব্যবহৃত হলেও মানবদেহে প্রবেশ করলে কিডনি বিকলসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অপূরণীয় ক্ষতি করে। বিশ্বজুড়ে আত্মহত্যার ক্ষেত্রেও এই বিষ ব্যবহারের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি।

রাজশাহীর একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করে বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়ক শহিদুল ইসলাম বলেন, "নিষিদ্ধ ওষুধ ব্যবহারের ফলে শুধু কৃষক নয়, জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যও মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে।"

বারসিকের নির্বাহী পরিচালক পাভেল পার্থ আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেন, "আমি নিজে রাজশাহীর বিভিন্ন দোকান থেকে বেশ কিছু নিষিদ্ধ কীটনাশক কিনেছি এবং তার রসিদও আমার কাছে আছে। এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ। প্রশাসনের উচিত দ্রুত এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।" তিনি কীটনাশক আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য একটি ক্ষতিপূরণ তহবিল গঠনের সুপারিশ করেন।

এই গবেষণা প্রতিবেদন নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মো. আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, "নিষিদ্ধ কীটনাশক বিক্রির বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছি। দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow