কাপ্তাইয়ে মসজিদ ও বিহারের সহাবস্থান: সম্প্রীতির অনন্য নজির গড়ে নির্মিত হচ্ছে তোরণ

রিপন মারমা, কাপ্তাই প্রতিনিধি, রাঙ্গামাটিঃ
Dec 27, 2025 - 12:54
 0  3
কাপ্তাইয়ে মসজিদ ও বিহারের সহাবস্থান: সম্প্রীতির অনন্য নজির গড়ে নির্মিত হচ্ছে তোরণ

পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরম এলাকা। এখানকার শতবর্ষী চিৎমরম বৌদ্ধ বিহার ও পার্শ্ববর্তী জামে মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় পাহাড়ি-বাঙালি মৈত্রীকে আরও সুদৃঢ় করতে উভয় সম্প্রদায়ের সম্মতিতে নির্মিত হচ্ছে বিহারের প্রধান তোরণ।

শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় কাপ্তাই সড়ক সংলগ্ন চিৎমরম বড় কিয়ং ঘাটে উৎসবমুখর পরিবেশে এই তোরণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। বিহারের পূজনীয় ভিক্ষু সংঘ মঙ্গল সূত্র পাঠের মাধ্যমে তোরণ নির্মাণকাজের শুভ সূচনা করেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, চিৎমরম বৌদ্ধ বিহারের প্রস্তাবিত প্রধান ফটকের খুব কাছেই অবস্থিত ব্যাঙছড়ি মুসলিম পাড়া বায়তুল জামে মসজিদ। বছরের পর বছর ধরে এখানে আজানের সুমধুর ধ্বনি আর বৌদ্ধ বিহারের শান্তির বাণী মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে। ধর্মীয় স্থাপনা নিয়ে যেখানে অনেক সময় স্পর্শকাতর পরিস্থিতি তৈরি হয়, সেখানে ব্যাঙছড়ি ও চিৎমরমের মানুষ অভিন্ন ভ্রাতৃত্বের এক অনন্য বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন। তোরণ নির্মাণ নিয়ে উভয় পক্ষ সহমত পোষণ করায় এলাকার দীর্ঘদিনের সাম্প্রদায়িক স্থিতিশীলতা আরও মজবুত হয়েছে।

স্থানীয় সমাজসেবক মো. জসিম উদ্দিন ও মসজিদ কমিটির প্রতিনিধি মো. সাত্তার বলেন, “আমরা বছরের পর বছর ধরে এখানে ভাই-ভাই হিসেবে বসবাস করছি। আমাদের মাঝে কোনো বিভেদ নেই। বৌদ্ধ বিহারের গেইট হওয়া মানে আমাদের এলাকারই উন্নয়ন। আমরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।”

অন্যদিকে বিহার পরিচালনা কমিটির সদস্যরা জানান, মসজিদ ও বিহার এই জনপদের দুটি পবিত্র স্তম্ভ। বাঙালি প্রতিবেশীদের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন এই আনন্দকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এই তোরণটি কেবল বিহারের প্রবেশপথ নয়, বরং এটি হবে অত্র অঞ্চলের সম্প্রীতির প্রতীক।

ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ জানান, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ এই নির্মাণ কাজে সহযোগিতা করছেন। তোরণটির নকশা এমনভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে যেন তা সড়কের যান চলাচল, স্থানীয় ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বা মসজিদের প্রবেশপথে কোনো বিঘ্ন সৃষ্টি না করে।

অনুষ্ঠানে বিহার কমিটির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন কাপ্তাই উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক উথোয়াইমং মারমা, সমাজসেবক মংসুইপ্রু মারমা, ক্যওজমং চৌধুরী, পাইসুই উ মারমা, মংসুইউ মারমা প্রমুখ। মুসলিম সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন জসিম উদ্দিন, আব্দুল সাত্তার, মো. নিজাম উদ্দিন, আমান উল্লা মানিক ও আব্দুর রশিদ।

উল্লেখ্য, ১৯২৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ঐতিহ্যবাহী বিহারটি গত ১০০ বছর ধরে পাহাড়ে শান্তি ও ধর্মীয় অনুশাসন প্রচার করে আসছে। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বলছেন, কাপ্তাইয়ের এই সৌহার্দ্যপূর্ণ সহাবস্থান পুরো দেশের জন্য একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow