মাদকাসক্তি ও অবহেলায় করুণ মৃত্যু হেলাল উদ্দিনের: পাশে দাঁড়াল আখাউড়া ব্লাড ফাউন্ডেশন

বাধ্যতামূলক নীরবতায় থেমে গেল হেলাল উদ্দিনের জীবন। মাদকাসক্তি, পারিবারিক ভাঙন ও সমাজের অবহেলায় নিঃশেষ হয়ে যাওয়া এই মানুষটির করুণ মৃত্যুর পর সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিল আখাউড়া ব্লাড ফাউন্ডেশন।
আখাউড়ার গঙ্গাসাগর গ্রামের ৫০ বছর বয়সী হেলাল উদ্দিন, পিতা—রমজান আলী, গত কয়েকদিন ধরে গঙ্গাসাগর রেলওয়ে স্টেশনের পাশে অচেতন অবস্থায় পড়ে ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে ৮ জুন (রবিবার) আখাউড়া ব্লাড ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবীরা এগিয়ে আসেন এবং তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান।
তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে, চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান হেলাল উদ্দিন। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, হাসপাতালে দায়িত্বরত ডাক্তার ও নার্সদের অবহেলার কারণেই এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
পরবর্তীতে ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত হওয়া হেলাল উদ্দিনের মরদেহ শনাক্ত করেন তার ১৬ বছরের একমাত্র ছেলে ও ভাগিনা। ছেলেটি জানায়, মা ডিভোর্স দিয়ে চলে যাওয়ার পর বাবার মানসিক ভারসাম্য ভেঙে পড়ে। তিনি দীর্ঘদিন মাদকের নেশায় জড়িয়ে পড়েন এবং একপ্রকার গৃহহীন অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকতেন। আত্মীয়স্বজনও তাকে চেনার চেষ্টা করেননি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে সে বলে, “আমি ছোট মানুষ, কিছু বুঝে উঠতে পারিনি, কি করব—না করব…”
জানা যায়, হেলাল উদ্দিন প্রায় ৩০ বছর প্রবাসে ছিলেন, কিন্তু আর্থিকভাবে নিজেকে গুছিয়ে তুলতে পারেননি। পরিবার তার উপার্জন খরচ করে ফেলার পর দেশে ফিরে গঙ্গাসাগর চৌমুহনী এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।
মৃত্যুর পর আখাউড়া ব্লাড ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক রবিন ও উপদেষ্টা সাংবাদিক-সমাজকর্মী মো. শাহাবুদ্দিন আহমেদের উদ্যোগে এবং আখাউড়া থানা পুলিশের সহযোগিতায় আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে রাত ৩টার দিকে হেলাল উদ্দিনের মরদেহ পৌঁছে দেওয়া হয় তার বোন জামাইয়ের বাড়িতে।
আখাউড়া ব্লাড ফাউন্ডেশন মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্তদের অবহেলার বিষয়টি তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
What's Your Reaction?






