চামড়া সংরক্ষণে সরকারের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ : বিনামূল্যে বিতরণ ২০ কোটি টাকার লবণ

ঈদুল আজহা ২০২৫-এ কোরবানিকৃত প্রাণীর চামড়া সংরক্ষণে ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এবার স্থানীয় পর্যায়ে লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণের জন্য ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১১ হাজার ৫৭১ মেট্রিক টন লবণ বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। এতিমখানা, মাদ্রাসা ও লিল্লাহ বোর্ডিংসমূহে এ লবণ পৌঁছে দিতে ইতোমধ্যেই জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে।
সরকারের এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য কোরবানিকৃত চামড়া নষ্ট হওয়া রোধ করে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা। চামড়ার বাজারমূল্য সুরক্ষা এবং চামড়া শিল্পে গতি ফেরাতেই এই পদক্ষেপ—বলেছেন বিসিকের ডিজিএম ও লবণ সেলের প্রধান মো. সরোয়ার হোসেন। তিনি জানান, “চামড়া আমাদের দেশের অন্যতম রপ্তানিযোগ্য কাঁচামাল। এর সঠিক সংরক্ষণ ও ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির জন্যই আমরা লবণ বিতরণ করেছি।”
সরকারি তথ্যমতে, চলতি বছর প্রায় ১ কোটি ৩ লাখ প্রাণী কোরবানি হতে পারে এবং চামড়া সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজন ৬১ হাজার মেট্রিক টন লবণ। ইতোমধ্যেই দেশে মজুত রয়েছে ৯৩ হাজার মেট্রিক টন লবণ, যা চাহিদার তুলনায় ৩২ হাজার মেট্রিক টন বেশি। চামড়ার মৌসুমে যেন কৃত্রিম সংকট না হয়, সেজন্য কেজি প্রতি ৫ টাকা কমিয়ে এবার লবণের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
সরোয়ার হোসেন বলেন, “অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, চামড়া সংরক্ষণ না হওয়ায় তা নষ্ট হয়ে যেত এবং অসাধু সিন্ডিকেটগুলো দাম কমিয়ে দিত। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হতো সংরক্ষণকারী ও ব্যবসায়ীরা। বিনামূল্য লবণ বিতরণের ফলে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন হবে।”
সদরপুর উপজেলার ৯ রশি গ্রামের চামড়া ব্যবসায়ী মো. ইদ্রিস আলী জানান, তিনি এ বছর ১৮০০ পিস গরুর চামড়া সংরক্ষণ করেছেন। এজন্য তাকে ৬০০ বস্তা লবণ কিনতে হয়েছে। তিনি বলেন, “সরকার যদি এতিমখানা-মাদ্রাসার পাশাপাশি আমাদের মতো চামড়া সংরক্ষণকারীদেরও সহায়তা করত, তাহলে আমাদের খরচ অনেকটাই কমে যেত।”
এদিকে এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিং কর্তৃপক্ষ জানান, এবারই প্রথমবারের মতো তারা সরকারি উদ্যোগে চামড়া সংরক্ষণের জন্য লবণ পেয়েছেন। এ উদ্যোগে চামড়া সংরক্ষণে যে অভাবনীয় সাফল্য আসবে, সে ব্যাপারে তারা আশাবাদী।
চামড়া সংরক্ষণের এই পরিকল্পিত ব্যবস্থা সঠিক বাস্তবায়ন হলে চামড়া শিল্পে প্রাণ ফেরার পাশাপাশি রপ্তানি আয়ও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
What's Your Reaction?






