পাহাড়ে ট্রেকিংয়ে মৃত্যুর মিছিল: প্রশ্নবিদ্ধ ‘ট্যুর এক্সপার্ট’ দলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা

পাহাড়ের চূড়া জয়, ঝর্ণার উৎসধারা দেখা কিংবা অজানা ট্রেইলে হাঁটা—শুধু রোমাঞ্চ নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে জীবনের বড় ঝুঁকিও। অভিজ্ঞতা, শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি ছাড়া পাহাড়ি অভিযান হতে পারে প্রাণঘাতী। সম্প্রতি বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ে ট্যুর এক্সপার্ট নামে একটি বেসরকারি ভ্রমণ সংগঠনের ট্যুরে অংশ নিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন আরও তিন জন তরুণ-তরুণী। এর আগেও এই দলের একজন সদস্যের মৃত্যু ঘটেছিল একই এলাকায়।
‘ট্যুর এক্সপার্ট’ নামের ভ্রমণ সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক বর্ষা ইসলাম। জানা গেছে, গত ২০২৩ সালে এই দলের একটি অভিযানে বর্ষার স্বামী মোহাম্মদ আতাহার ইশরাক রাফি আলীকদমের সাইংপ্রা ঝর্ণার ট্রেইলে পড়ে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তারপরও এ বছর বর্ষা ইসলামের নেতৃত্বে একটি ৩৩ সদস্যের দল আলীকদমের পাহাড়ি পথে যাত্রা করে। সেখান থেকে ফেরার পথে তিন সদস্য—জুবাইরুল ইসলাম, স্মৃতি আক্তার ও হাসান—মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারান।
অভিযোগ উঠেছে, এসব অভিযানে প্রাথমিক প্রস্তুতি, নিরাপত্তা, উপযুক্ত গাইড এবং সরকারি অনুমতির বিষয়গুলো যথাযথভাবে মানা হয়নি। স্থানীয়রা বলছেন, বর্ষা ইসলাম মূলত সমতলের মানুষ। পাহাড়ি পরিবেশ, স্থানীয় সংস্কৃতি ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা না থাকলেও তিনি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে এসব ট্রেকিং আয়োজন করে আসছেন।
স্থানীয় নৃগোষ্ঠীর অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, পাহাড়ে চলাফেরা সহজ নয়। খাড়া ঢাল, হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তন, সরু ঝিরিপথ ও পিচ্ছিল পাহাড়ি মাটি মারাত্মক বিপদের কারণ হতে পারে। তারা জানায়, দুর্গম পাহাড়ে চলার জন্য প্রয়োজন হয় সঠিক গিয়ার, প্রশিক্ষণ, মানসিক দৃঢ়তা এবং সর্বোপরি স্থান সম্পর্কে নিবিড় জ্ঞান।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি এলাকায় অভিযান পরিচালনা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। প্রয়োজনীয় সতর্কতা ও সরঞ্জাম ছাড়া এতে অংশগ্রহণ জীবনঘাতী হতে পারে।
এই ঘটনার পর বর্ষা ইসলামের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে। মৃত্যুর ঘটনায় দায় স্বীকার করে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালাতে চাইলে ভ্রমণকারীদের অবশ্যই প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে, নিযুক্ত করতে হবে অভিজ্ঞ স্থানীয় গাইড এবং অবশ্যই সশস্ত্র বাহিনীর নীতিমালার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। কারণ এই অঞ্চল ত্রিদেশীয় সীমান্তসংলগ্ন এবং ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।
এই দুর্ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ভ্রমণের উন্মাদনা কখনোই নিরাপত্তার চেয়ে বড় হতে পারে না। পর্যটনের নামে জীবন নিয়ে খেলাধুলা নয়—এটাই হওয়া উচিত ভ্রমণ উদ্যোক্তাদের মৌলিক দর্শন।
What's Your Reaction?






