ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় নয় বছরের শিশুর আত্মহত্যা, অভিমানের বলি এক নিষ্পাপ প্রাণ

“আমি কামারগ্রাম মাদ্রাসায় পড়তে চাই” - মায়ের কাছে এমন বায়না করেছিল নয় বছরের হাসিব শেখ। মা বলেছিলেন, “বাবা, এখন হাতে টাকা নেই, যোগাড় হলেই ভর্তি করাবো।” হয়তো এটুকুই ছিল ছোট্ট হাসিবের জন্য বড় এক অভিমান। সেই অভিমানে রবিবার (২৯ জুন) সন্ধ্যায় ঘরের হাড়ার সঙ্গে গলায় দড়ি দিয়ে নিজের জীবনই শেষ করে দিল সে। ঘটনাটি ঘটেছে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার বুড়াইচ ইউনিয়নের পাকুড়িয়া গ্রামে। পুরো এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া, বিষণ্নতা আর এক নিঃসীম প্রশ্ন - এমনটা কেন ঘটলো?
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাসিব শেখ দক্ষিণ শিরগ্রাম মাদ্রাসার নাজেরা শ্রেণির ছাত্র ছিল। তার বাবা আবু নাসের শেখ কৃষিকাজে নিয়োজিত এবং মা হাসি বেগম একজন গৃহিণী। অতি সাধারণ সংসারে অভাব-অনটনের ছাপ প্রতিটি কোণায়। দুই সন্তানের মধ্যে হাসিব ছিল বড়।
সম্প্রতি হাসিব তার মাদ্রাসা পরিবর্তনের ইচ্ছা প্রকাশ করে মায়ের কাছে। সে কামারগ্রাম মাদ্রাসায় পড়তে চায় বলে জানায়। মা তাকে আশ্বস্ত করলেও অভাবের কারণে ভর্তি করাতে পারেননি। এ নিয়ে মা-ছেলের মধ্যে সামান্য বাকবিতণ্ডা হয়। এরপর রবিবার সন্ধ্যায় দরজা বন্ধ করে ঘরে ঢোকে হাসিব। দীর্ঘক্ষণ কোনো সাড়া না পেয়ে জানালায় উঁকি দিয়ে পরিবারের লোকজন দেখে, ঘরের হাড়ার সঙ্গে ঝুলছে হাসিবের নিথর দেহ।
তাদের চিৎকারে ছুটে আসে প্রতিবেশীরা। খবর দেওয়া হয় থানা পুলিশে। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
হাসিবের মা হাসি বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, "আমার সোনা পাখিটা এমন করবে ভাবিনি। ও বলেছিল নতুন মাদ্রাসায় যাবে, আমি বলেছিলাম হাতে টাকা নেই, একটু সময় দে—ও যে এমন করে চলে যাবে, বুঝতেই পারিনি।”
আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহজালাল আলম বলেন, "স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে। শিশুটির মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে তদন্ত চলছে।"
স্থানীয়দের অনেকে বলছেন, এমন ঘটনা শুধু একটি পরিবারের নয়—এ যেন সমাজের প্রতিচ্ছবি। একটি ছোট্ট চাওয়ার জবাবে অপূর্ণতা, আর তা থেকেই চিরদিনের বিদায়!
What's Your Reaction?






