রাজনীতি নিষিদ্ধ ক্যাম্পাসে ছাত্রদলকে সামনে রেখে কুবি প্রশাসনের র্যালি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ১৯তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার (২৮ মে) সকালে প্রশাসনের আয়োজিত র্যালিতে অছাত্রদের সামনের সারিতে রেখে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে প্রাধান্য দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার পরও এই ধরনের কর্মকাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূলনীতি লঙ্ঘিত হওয়ায় নানা অভিযোগ উঠেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও অংশগ্রহণকারীদের বরাতে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে সকাল সাড়ে ১০টায় শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি র্যালি আয়োজন করে। তবে র্যালির ব্যানারের সামনের সারিতে ছিলেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতা মণ্ডলীর কয়েকজন অছাত্র, যাদের মধ্যে ছিলেন আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন ও সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভ। তারা দুজনেই গত এক দশক আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব শেষ করেছেন। এছাড়াও র্যালির শেষে কেক কাটার অনুষ্ঠানে প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গ ও শিক্ষকদের সাথে তাদের সামনে উপস্থিতি দেখেছে অনেকে।
কিছু শিক্ষক অভিযোগ করেন, শিক্ষকদের সম্মান না রেখে অছাত্রদের এমনভাবে সামনের সারিতে রাখা অবাঞ্ছিত ও শিষ্টাচারের পরিপন্থী। কুবি শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভ জানান, ‘আমাদের এখানে কোনো দলীয় প্রোগ্রাম ছিল না। শিক্ষকরা আমাদের ডাক দিয়ে সেখানে দাঁড় করিয়েছেন। আমরা এখনও ভর্তি আছি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।’
আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমি রানিং শিক্ষার্থী নই, তবে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে আমরা সেখানে উপস্থিত হয়েছি খুশি ভাগাভাগি করার জন্য।’
একজন শিক্ষক বলেন, ‘আমরা র্যালিতে ছিলেন, কিন্তু ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা আমাদের ডিঙ্গিয়ে সামনের সারিতে চলে আসে। একজন শিক্ষকও তাদের ব্যানার ধরতে উৎসাহিত করেছেন।’
২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এমরান হোসেন বলেন, ‘অছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যানার ধরে র্যালিতে থাকা আমরা সাপোর্ট করি না। ৫ আগস্টের পর যারা অন্যায়কে অন্যায় বলতে সাহসী হয়েছে, তাদের উচিত এই ধরনের অনাচার থেকে বিরত থাকা।’
আরেক শিক্ষার্থী পাবেল রানা বলেন, ‘ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ। যদি কেউ রাজনীতির সুযোগ পায় এবং শিক্ষকরা এতে সম্মতি দেন, তাহলে সেটা নিন্দনীয় ও অন্যায়।’
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন কমিটি-২০২৫ এর আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এম এম শরীফুল করিম বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে জানান, অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য আলাদা আলাদা কমিটি রয়েছে, যারা বক্তব্য দেবে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, ‘ক্যাম্পাসে অছাত্র থাকা আমার জন্য অস্বস্তিকর। এটি রেগুলার শিক্ষার্থীদের জন্য। ক্যাম্পাসে লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বন্ধ হোক, এটাই আমি চাই।’
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি নিষিদ্ধ নীতির প্রতি শিক্ষার্থীদের আস্থা ক্ষুণœ হওয়ার পাশাপাশি প্রশাসনের এমন আচরণ ক্যাম্পাসে সাম্যের পরিবেশ বজায় রাখতে বাধা সৃষ্টি করছে বলে মনে করা হচ্ছে।
What's Your Reaction?






