বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে সড়ক ও কালভার্ট নির্মাণ

মাদারীপুরের কালকিনি পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের ৩নং দক্ষিণ রাজদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ দখল করে সড়ক ও কালভার্ট নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বি.এম. সরোয়ার হোসেনের সহযোগিতারও অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাস্তার পশ্চিম পাশে সরকারি হালট থাকা সত্ত্বেও ঠিকাদার ও প্রধান শিক্ষকের যোগসাজশে বিদ্যালয়ের জমি দখল করে সড়ক নির্মাণ করা হয়। কাজ চলাকালীন প্রধান শিক্ষক কোনো প্রতিবাদ জানাননি কিংবা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিতও করেননি।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের আইইউজিপি প্রকল্পের আওতায় ২ কোটি ১৩ লাখ ৯১ হাজার ৭৪৬ টাকা ব্যয়ে দক্ষিণ রাজদী খোকন হাওলাদারের বাড়ি থেকে দক্ষিণ রাজদী বিসি রোড হয়ে বিদ্যালয়ের সামনের অংশ পর্যন্ত ৬৬৫ মিটার সড়ক ও কালভার্ট নির্মাণের কাজ পায় আবেদ মনসুর কনস্ট্রাকশন। পরে মেসার্স সর্দার (জেভি) প্রতিষ্ঠান সাব-কন্ট্রাক্ট নিয়ে কাজ বাস্তবায়ন করে।
বিদ্যালয়ের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, খেলাধুলার জায়গা দখল করে সড়ক ও কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এতে শিশু শিক্ষার্থীদের খেলার স্থান একেবারেই সীমিত হয়ে গেছে। এ ঘটনায় স্থানীয় সচেতন মহলে ব্যাপক অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, প্রধান শিক্ষক বলেছেন— “যাদের এলাকায় স্কুল, তারা কিছু বলে না। আমার কি? এটা কি আমার বাপের জমি?” তাদের প্রশ্ন, সরকারি ২২ ফুট হালট থাকা সত্ত্বেও বিদ্যালয়ের জায়গা দিয়ে কেন সড়ক নির্মাণ হলো? প্রধান শিক্ষক কি ঠিকাদারের সাথে যোগসাজশে এ কাজ করতে দিলেন?
ঠিকাদার আব্দুর রহমান পন্নু হাওলাদার বলেন, “প্রধান শিক্ষকের উপস্থিতিতে রাস্তা ও কালভার্ট নির্মাণ করেছি।” এরপর তিনি ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।
প্রধান শিক্ষক বি.এম. সরোয়ার হোসেন দাবি করেন, তিনি ইউএনওকে জানিয়েছিলেন এবং কাজে বাধা দিয়েছিলেন, কিন্তু ঠিকাদার শোনেননি। তবে তিনি স্বীকার করেন, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বা ম্যানেজিং কমিটিকে অবহিত করেননি।
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ক্ষীরোদ চন্দ্র রায় বলেন, “প্রধান শিক্ষক আমাকে কিছুই জানাননি। আপনার কাছ থেকে জেনেই বিষয়টি জানতে পারলাম।”
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. বদিউজ্জামান বলেন, “বিদ্যালয়ের জমি দখল করে সড়ক ও কালভার্ট নির্মাণের বিষয়টি আমি জানি না।”
পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী রাকিব হাসান বলেন, “পৌরসভার নিজস্ব জমি না থাকায় সরকারি বা ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে সড়ক ও কালভার্ট নির্মাণ করি।”
কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌরসভার প্রশাসক সাইফ-উল-আরেফিন বলেন, “আমি আপনার মাধ্যমে বিষয়টি জানলাম। প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছ থেকে বিস্তারিত জানব। স্কুলের জমি স্কুলের নামে রেকর্ডভুক্ত থাকে। যদি প্রধান শিক্ষকের গাফিলতি প্রমাণিত হয়, বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
What's Your Reaction?






