ভাঙ্গনের হুমকিতে পড়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেঘনা নদীর তীরবর্তী ১৪ টি গ্রাম

মাহমুদুল হাসান, ভ্রাম্যমান প্রতিনিধিঃ
Jun 2, 2025 - 19:36
 0  2
ভাঙ্গনের হুমকিতে পড়েছে  ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেঘনা নদীর তীরবর্তী ১৪ টি গ্রাম

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নে আবারও ভয়াবহ নদীভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মেঘনা নদীর তীব্র ঢেউ ও পানি বৃদ্ধির কারণে ইউনিয়নের অন্তত ১৪টি গ্রাম নতুন করে হুমকির মুখে পড়েছে।

গত ২-৩ দিনের ভারী বর্ষণে নদীর পানি বাড়ায় ইউনিয়নের শোলাবাড়ি, শাখাইতি, দেওবাড়িয়া, নতুন হাটি, নরসিংহপুর ও নাইলা গ্রামের পাশাপাশি লাইয়ার হাটি ও আশপাশের গ্রামের মানুষজন বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাচ্ছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পানিশ্বর ইউনিয়নে গত ১৩ বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে নদীভাঙন চলছে। বর্ষা এলেই নদীর প্রবল স্রোত ও ঢেউয়ের তোড়ে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম, চাতালকল ও বাজার। এখন পর্যন্ত ভাঙনের স্থায়ী সমাধান হয়নি, নির্মিত হয়নি প্রতিশ্রুত ভেড়িবাঁধও।

ভুক্তভোগীরা জানান, ২০১২ সাল থেকে শুরু হওয়া এই নদীভাঙনে পানিশ্বর মৌজা ও পালপাড়াসহ অনেক গ্রাম একেবারে বিলীন হয়ে গেছে। নদীতে হারিয়ে গেছে মাহমুদ, পলাশ, খাজা, শ্রীগুরু, বজলু মিয়া, দারু মিয়া, নুরু মিয়া ও উসমান চৌধুরীর মালিকানাধীন প্রায় ৪৫টি চাতাল মিল। সমিরবাড়ির মসজিদ ও বেশ কিছু বাড়ি-ঘর নদীগর্ভে চলে গেছে।

পানিশ্বর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোঃ ছাদু মিয়া, সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ মোস্তফা মিয়া এবং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ছাদেক মিয়া জানান, প্রতি বর্ষায় ভাঙন শুরু হলে সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, এমনকি পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজনও এসে পরিদর্শন করেন। কিছু জিও ব্যাগ ফেলা হয়, ছবি তোলা হয়, প্রতিশ্রুতির বন্যা বয়ে যায়। কিন্তু ১৩ বছরেও প্রতিশ্রুতি বাস্তবে রূপ নেয়নি। ভেড়িবাঁধ কেবল কাগজেই রয়ে গেছে।

স্থানীয়রা আরও জানান, গত ৬ মে প্রায় ৫১ লাখ টাকার জিও ব্যাগ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। ১৩ মে সেই বরাদ্দকৃত প্রকল্পের টেন্ডার হওয়ার কথা থাকলেও ঠিক একদিন আগেই ১২ মে টেন্ডার বাতিল করে দেওয়া হয়, যা নতুন করে হতাশা সৃষ্টি করেছে।

সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মোশারফ হোসাইন বলেন, ভাঙনের অবস্থা সরেজমিনে দেখেছি, পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে আজবপুরসহ পুরো এলাকা ঘুরে দেখেছি। আজবপুরের বড় ভাঙন ঠেকাতে উপজেলা প্রশাসন থেকে দেড় লাখ টাকা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের জিও ব্যাগ দিয়ে কাজ করা হয়েছে। পানিশ্বর ও আশপাশের ১২-১৪টি গ্রাম রক্ষার জন্য জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে জানিয়েছি। একটি বড় প্রকল্পের বরাদ্দও হয়েছিল, তবে তা আর্থিক সংকটে আটকে গেছে।

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ভবিষ্যতে সেই বরাদ্দ পাওয়া গেলে দীর্ঘমেয়াদী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।

ভাঙনপীড়িতদের এখন একটাই দাবি—তাদের আর আশ্বাস নয়, প্রয়োজন বাস্তব পদক্ষেপ। দীর্ঘ ১৩ বছরের এই অবহেলার অবসান ঘটিয়ে দ্রুত ভেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow