ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের শাহিনুর হত্যাকাণ্ডের চাঞ্চল্যকর রহস্য উন্মোচন

পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা না দেওয়ায় কী নির্মমভাবেই না খুন হতে হয়েছিল প্রবাসীর স্ত্রী শাহিনুর আক্তারকে (২৫)! ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে ঘটে যাওয়া এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের রহস্য অবশেষে উন্মোচন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তথ্যপ্রযুক্তির জালে ধরা পড়েছে এই হত্যাকাণ্ডের অন্যতম হোতা, এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও জুয়াড়ি মো. সুজন মিয়া (৩৭)।
গ্রেপ্তারের পর আদালতে দেওয়া তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেই বেরিয়ে এসেছে সেই রাতের নারকীয় ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা।
পিবিআই-এর পুলিশ সুপার শচীন চাকমা জানান, নিহত শাহিনুর তার প্রথম স্বামীকে তালাক দিয়ে সৌদি প্রবাসী হাসান মিয়াকে বিয়ে করে বাঞ্ছারামপুর পৌর এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় একাই থাকতেন। গত ১৭ জুলাই, গ্রেপ্তারকৃত সুজনসহ আরও তিনজন শাহিনুরের বাসায় গিয়ে তার কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। শাহিনুর এই অন্যায় আবদারে রাজি না হওয়ায় এবং চিৎকার করার চেষ্টা করলে, ঘাতকরা তার পেটে ধারালো চাকু দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে। মৃত্যু নিশ্চিত করে তারা বাইরে থেকে রুমের দরজায় তালা লাগিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
এর একদিন পর, ১৮ জুলাই রাতে, রুম থেকে পচা দুর্গন্ধ বের হলে প্রতিবেশীরা শাহিনুরের বাবাকে খবর দেন। তিনি এসে পুলিশকে জানালে, পুলিশ তালা ভেঙে ঘরের ভেতর থেকে শাহিনুরের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে।
এই নৃশংস ঘটনার পর শাহিনুরের বাবা গিয়াস উদ্দিন বাদী হয়ে বাঞ্ছারামপুর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার গুরুত্ব অনুধাবন করে পিবিআই ছায়া তদন্ত শুরু করে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় পিবিআই নিশ্চিত হয়, ঘটনার মূল হোতা সুজন মিয়া ঢাকায় আত্মগোপন করেছে।
অবশেষে গত ২৬ জুলাই রাতে পিবিআই-এর একটি চৌকস দল ঢাকার কামরাঙ্গীরচর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে। প্রথমে অস্বীকার করলেও, জিজ্ঞাসাবাদের মুখে সুজন একপর্যায়ে ভেঙে পড়ে এবং হত্যাকাণ্ডের আদ্যোপান্ত স্বীকার করে। গত ৩০ জুলাই তাকে আদালতে হাজির করা হলে, সে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
পুলিশ সুপার শচীন চাকমা আরও জানান, এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে। একজন নিরীহ প্রবাসীর স্ত্রীর এমন নির্মম পরিণতিতে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে এবং এলাকাবাসী বাকি অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
What's Your Reaction?






