তিন মিনিটের জন্য বেঁচে গেলো সানিয়া, মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এল আশুলিয়ার এই শিক্ষার্থী

উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ঘটে যাওয়া হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনায় মাত্র তিন মিনিটের ব্যবধানে প্রাণে রক্ষা পেলেন আশুলিয়ার কৃতি শিক্ষার্থী সুমাইয়া সরকার সানিয়া (১১)। সে বাংলাদেশ তথ্য ও মানবাধিকার ফাউন্ডেশন (বামাফা) ঢাকা বিভাগীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ সিরাজুল ইসলাম সরকারের মেজো কন্যা এবং মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী।
প্রতিদিন স্কুলে ছুটি হয় দুপুর ১টায় এবং এরপর কোচিং ক্লাস চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। কিন্তু সোমবার (২১ জুলাই) হঠাৎ অসুস্থতা অনুভব করায় সানিয়া কোচিং না করে আগেই স্কুল থেকে বেরিয়ে যায়। সে বাহিরে আসার মাত্র তিন মিনিটের মধ্যেই বিমানটি ক্যান্টিনে বিধ্বস্ত হয়। পরিবারের দাবি, আল্লাহর অশেষ রহমতেই সে প্রাণে বেঁচে গেছে। মেয়েকে জীবিত ফিরে পেয়ে সানিয়ার বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করেন।
সানিয়ার বাবা বলেন, "আমার মেয়ে হয়তো আল্লাহর অসীম রহমতে বেঁচে গেছে। কিন্তু যে দৃশ্য আমি সামনে থেকে দেখেছি, তা কোনোদিন ভুলতে পারব না। কে জানতো এমন একটি দিন আমাদের জীবনে আসবে! আমি মেয়েকে তার মায়ের হাতে দিয়ে সাথে সাথেই উদ্ধার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ি। যতটুকু পেরেছি সহযোগিতা করেছি। আমি দোয়া করি যারা আহত হয়েছেন তারা যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং যারা মারা গেছেন তাদের আল্লাহ জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন।"
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, দুর্ঘটনার সময় ক্লাস চলছিল স্বাভাবিক নিয়মে। কেউ ভাবেনি এই নিরীহ দুপুরটায় আকাশ থেকে আগুন নেমে আসবে। হঠাৎ একটি বিমান এসে ক্যান্টিনের ছাদে আঘাত হানে। মুহূর্তেই আগুনে পুড়ে যায় সবকিছু, ধোঁয়ায় ঢেকে যায় চারদিক। গলিত দেয়ালের নিচে চাপা পড়ে যায় শৈশবের সরলতা। কেউ একজন তখন কবিতা লিখছিল, কেউবা বন্ধুর খাতা থেকে ক্লাসনোট তুলছিল—সব থেমে যায় একটি মুহূর্তেই।
পুড়ে যাওয়া কাপড়ের গন্ধ, নিঃশেষ হয়ে যাওয়া নিঃশ্বাস, আর ‘মা মা’ করে চিৎকার করা শিশুর কণ্ঠস্বর—এসব শব্দ যেন ভাষার গণ্ডিও ছাড়িয়ে যায়। যারা বাইরে থেকে সবকিছু দেখেছেন, তাদের কিছুই করার ছিল না। শুধু দু’হাত তুলে প্রার্থনা করা ছাড়া—"হে আল্লাহ! যারা ঘরে ফিরবে না, তাদের মা যেন অন্তত একটা শেষ চুমু দিতে পারেন। আর যারা বেঁচে গেছে, তাদের স্বপ্ন যেন আর কখনও আগুনে পুড়ে না যায়।"
এখনো উদ্ধার কার্যক্রম চলছে। মৃত ও আহতদের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করছে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। স্কুল প্রাঙ্গণ এখন শুধুই কান্নার দৃশ্যপট।
What's Your Reaction?






