খাগড়াছড়িতে ত্রিপুরা কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ভাইবোনছড়া এলাকায় ১৪ বছরের এক ত্রিপুরা কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর বাবার দায়ের করা মামলায় পুলিশ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। অভিযুক্তদের মধ্যে স্থানীয় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীও রয়েছেন। ঘটনার প্রতিবাদে ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে জেলা শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিভিন্ন সংগঠন।
মামলার এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ জুন পানছড়ির লতিবান এলাকার ওই কিশোরী রথযাত্রা উৎসব উপলক্ষে ভাইবোনছড়া এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যায়। রাতে মেলা থেকে ফিরতে দেরি হওয়ায় সে ওই বাড়িতেই থেকে যায়। গভীর রাতে অভিযুক্তরা ঘরে ঢুকে ‘অবৈধ সম্পর্ক’ স্থাপনের মিথ্যা অভিযোগ তুলে কিশোরীর আত্মীয়কে বেঁধে ফেলে। এরপর তারা কিশোরীটিকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে।
ভুক্তভোগী কিশোরীর পরিবার জানায়, ঘটনার পর সামাজিক লজ্জা ও ভয়ে কিশোরীটি প্রথমে বিষয়টি কাউকে জানায়নি। পরে মানসিক যন্ত্রণায় গত শনিবার সে বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তাকে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করার পর সে পরিবারের কাছে পুরো ঘটনা খুলে বলে।
খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক রিপল বাপ্পি চাকমা জানান, ‘কিশোরীটি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এবং তার অবস্থা গুরুতর। তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আরোফিন জুয়েল বলেন, ‘কিশোরীর বাবার মামলা দায়েরের পরপরই আমরা চার আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। বাকিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
এ ঘটনায় কিশোরীর বাবা মোট ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পুলিশ তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—ভাইবোনছড়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আরমান হোসেন (৩২), ইমন হোসেন (২৫), এনায়েত হোসেন (৩৫) এবং শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন (৩২)।
পলাতক দুই আসামি হলেন ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মুনির ইসলাম (২৯) ও ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সোহেল ইসলাম (২৩)।
এদিকে, এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদে এবং অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে খাগড়াছড়ি শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও সাধারণ শিক্ষার্থী’দের ব্যানারে আয়োজিত কর্মসূচিতে বিভিন্ন মানবাধিকারকর্মী ও সচেতন নাগরিকরা অংশ নেন। বিক্ষোভকারীরা শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শাপলা চত্বরের মুক্তমঞ্চে সমাবেশ করেন।
অন্যদিকে, জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ভুক্তভোগী কিশোরীকে দেখতে যান জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম এন আবছারসহ দলের নেতারা। এ সময় তারা সাবেক সাংসদ ওয়াদুদ ভূঁইয়ার পক্ষ থেকে ভুক্তভোগীর পরিবারকে এক লক্ষ টাকা চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করেন এবং ভবিষ্যতেও পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
What's Your Reaction?
মোহাম্মদ কেফায়েত উল্লাহ, জেলা প্রতিনিধি, খাগড়াছড়িঃ