"আমরা কুকুর নই": বিমান থেকে ফেলা ত্রাণে ক্ষুব্ধ ও অপমানিত গাজাবাসী

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
Jul 29, 2025 - 13:51
 0  1
"আমরা কুকুর নই": বিমান থেকে ফেলা ত্রাণে ক্ষুব্ধ ও অপমানিত গাজাবাসী

যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার আকাশে যখন প্যারাসুট নামে, তখন ক্ষুধার্ত মানুষের চোখেমুখে ফুটে ওঠার কথা স্বস্তির ছাপ। কিন্তু বাস্তবতা ঠিক তার উল্টো। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এই মানবিক সহায়তা পদ্ধতিকেই এখন গাজাবাসী ফিলিস্তিনিরা তাদের জন্য চরম অপমানজনক ও মর্যাদাহানিকর বলে আখ্যা দিচ্ছে। আকাশ থেকে ফেলা এক টুকরো খাবারের জন্য দৌড়ানো এবং কাড়াকাড়ি করার দৃশ্য তাদের আত্মমর্যাদাকে ক্ষতবিক্ষত করছে। এটি সাহায্যের নামে এক ধরনের উপহাস—এমনটাই মনে করছেন তারা।

এই অপমানবোধই যেন প্রতিধ্বনিত হলো স্থানীয় বাসিন্দা আহমেদ ফায়েজ ফায়াদের কণ্ঠে। ক্ষোভে ফেটে পড়ে তিনি বলেন, “আমরা কুকুর নই যে খাবারের জন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকব বা এক টুকরো রুটির জন্য নিজেদের মধ্যে লড়াই করব। এই প্রদর্শনীমূলক সাহায্য আমরা চাই না।” একই হাতাশা ঝরে পড়ল আরেক ফিলিস্তিনি মায়ের কণ্ঠে, যিনি তিন দিন ধরে তার ক্ষুধার্ত সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে পারেননি। অশ্রুসিক্ত চোখে তিনি বলেন, “আমার শিশু ক্ষুধায় ছটফট করে, আর আমাকে এই অপমান সহ্য করতে হয়? আমাদের ভিক্ষা নয়, আমাদের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দিন।”

ফিলিস্তিনিদের এই তীব্র ক্ষোভের পেছনে রয়েছে একাধিক বাস্তব ও মনস্তাত্ত্বিক কারণ। বিমান থেকে ফেলা বেশিরভাগ ত্রাণ প্যাকেজ হয় সমুদ্রে পড়ছে, নয়তো পড়ছে যুদ্ধবিধ্বস্ত বিপজ্জনক এলাকায়, যা সংগ্রহ করতে যাওয়াটাও জীবন বাজি রাখার সামিল। বহু কষ্টে সংগ্রহ করা গেলেও দেখা যায়, উঁচু থেকে পড়ার আঘাতে খাবারের প্যাকেটগুলো ভেঙে নষ্ট হয়ে গেছে। স্থলপথে পর্যাপ্ত ত্রাণ বিতরণের কার্যকর ব্যবস্থা না করে আকাশ থেকে এভাবে ত্রাণ দেওয়াকে তারা 'লোক দেখানো' কর্মকাণ্ড হিসেবে দেখছে, যা তাদের মানসিক যন্ত্রণা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

মানবাধিকার সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরাও এই পদ্ধতিকে অকার্যকর বলছেন। জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিএনএন নিউজকে জানিয়েছেন, “এটি কোনো স্থায়ী বা সম্মানজনক সমাধান নয়। গাজার প্রতিটি পরিবারের দোরগোড়ায় পর্যাপ্ত ও নিরবচ্ছিন্ন সহায়তা পৌঁছানোর একমাত্র কার্যকর উপায় হলো অবিলম্বে অবরোধ প্রত্যাহার করে স্থল সীমান্তগুলো পুরোপুরি খুলে দেওয়া।”

শেষ পর্যন্ত এই সংকট শুধু খাদ্যের নয়, বরং মৌলিক মানবিক মর্যাদার। যেমনটা বলেছেন গাজার একজন শিক্ষক, “আমরা ভিক্ষুক নই। আমরা কেবল আমাদের অধিকার চাই—নিরাপদ জীবন এবং সম্মানের সাথে বাঁচার অধিকার।” তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এখন প্রশ্নটি আরও গভীর: তারা কি কেবল আকাশ থেকে খাবার ফেলেই দায়িত্ব শেষ করবে, নাকি ফিলিস্তিনিদের মানবিক মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় সত্যিকারের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে?

সূত্র: সিএনএন নিউজ

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow