দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
Dec 23, 2025 - 15:51
 0  2
দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা
ছবি : সংগৃহীত

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি ও পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় বাংলাদেশ হাইকমিশন ও উপহাইকমিশনের সামনে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করেছে একদল বিক্ষোভকারী। পরিস্থিতি সামাল দিতে উভয় শহরেই বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে হাইকমিশনের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা চালালে পরিস্থিতি দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। নিরাপত্তা বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে হস্তক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং আশপাশ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়।

একই দিনে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের সামনেও অনুরূপ ঘটনা ঘটে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু দেশটির সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের বরাতে জানায়, কয়েক শ বিক্ষোভকারী ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশকে পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খেতে হয়। বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলার প্রতিবাদের নামে এই বিক্ষোভে অংশ নেয় তারা।

পিটিআই ও দ্য হিন্দু কারা এই বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিল, সে বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য দেয়নি। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে গেরুয়া রঙের পতাকা হাতে একদল উত্তেজিত লোককে ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করতে দেখা যায়। এর আগের দিন সোমবার পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির নেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বেও বাংলাদেশবিরোধী বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, নয়াদিল্লিতে ‘বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন’ এবং ‘ময়মনসিংহে দিপু চন্দ্র দাস নামের এক হিন্দু যুবককে পিটিয়ে হত্যার’ অভিযোগের প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ আয়োজন করা হয়। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে অন্তত দুটি ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে বিক্ষোভকারীরা।

এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) ও বজরং দলের নাম উঠে এসেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় হাইকমিশনের সামনে তিন স্তরের ব্যারিকেড স্থাপন করা হয় এবং সেখানে পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে আটকও করা হয়েছে।

এর আগে গত ২০ ডিসেম্বর রাতেও দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের গেটে বিক্ষোভ করে একদল লোক। এ বিষয়ে দিল্লিতে বাংলাদেশের প্রেস মিনিস্টার মো. ফয়সাল মাহমুদ জানান, তিনটি গাড়িতে করে আসা কয়েকজন ব্যক্তি কিছুক্ষণ চিৎকার করে হাইকমিশনের গেটের সামনে অবস্থান নেয় এবং পরে সেখান থেকে চলে যায়।

এই ঘটনার পর ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল ২১ ডিসেম্বর এক বিবৃতিতে বাংলাদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদকে ‘বিভ্রান্তিকর প্রচারণা’ বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, মাত্র ২০-২৫ জন যুবক শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করেছিল এবং তারা কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করেনি।

তবে ভারতের এই বক্তব্য দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি কূটনৈতিক এলাকায় ঘটেছে, যা কোনোভাবেই সাধারণ ঘটনা নয়। তিনি প্রশ্ন তোলেন, অনুমতি ছাড়া কীভাবে একটি উগ্র গোষ্ঠী এত সুরক্ষিত কূটনৈতিক এলাকায় প্রবেশ করতে সক্ষম হলো।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, ভারতের প্রেস নোটে ঘটনাটিকে অতি সরলীকরণ করা হয়েছে, যা বাস্তব পরিস্থিতিকে প্রতিফলিত করে না। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে গুরুতর নিরাপত্তা ঘাটতির প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow