গাজায় দুই বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান, হামাস-ইসরায়েল শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর

দীর্ঘ দুই বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে অবশেষে শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস এবং ইসরায়েল। বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) মিশরের রাজধানী কায়রোতে উভয় পক্ষের প্রতিনিধিরা এই চুক্তিতে সম্মত হন। কাতার ও মিশরের নিবিড় মধ্যস্থতায় এই আলোচনা সফল হয়েছে, যা মূলত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনার ওপর ভিত্তি করে তৈরি। এই চুক্তির ফলে ৭ অক্টোবর, ২০২৩-এ শুরু হওয়া এই ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের অবসান ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই চুক্তিকে একটি যুগান্তকারী সাফল্য হিসেবে ঘোষণা করে বলেন, "এর মানে, সব জিম্মিকে খুব শিগগিরই মুক্তি দেয়া হবে। ইসরাইল সম্মত সীমারেখা পর্যন্ত সেনা প্রত্যাহার করবে।" তিনি এই দিনটিকে "বিশ্বের জন্য এক মহান দিন" বলে অভিহিত করেছেন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে এটিকে "ইসরায়েলের জন্য একটি মহান দিন" বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি আরও জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই চুক্তির আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রীয় অনুমোদন দেওয়া হবে।
চুক্তির বিশদ বিবরণ অনুযায়ী, এটি মূলত ট্রাম্পের ২০-দফা শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপের বাস্তবায়ন। এই ধাপে হামাস তাদের হাতে থাকা জীবিত ও মৃত সকল ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে। এর বিনিময়ে ইসরায়েল স্থায়ীভাবে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করবে এবং চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সীমানা থেকে তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করে নেবে। চুক্তির অংশ হিসেবে ইসরায়েলের কারাগার থেকে বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দীকেও মুক্তি দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলের অভ্যন্তরে এক নজিরবিহীন হামলা চালায়, যেখানে প্রায় ১,২০০ জন ইসরায়েলি নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। ওই হামলার পর থেকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গাজা উপত্যকায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে। গত দুই বছরের সংঘাতে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, প্রায় ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ২০ হাজারের বেশি শিশু রয়েছে। এই যুদ্ধে গাজা উপত্যকা প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং এক ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে। এর আগেও দুই পক্ষের মধ্যে দুই দফায় যুদ্ধবিরতি এবং বন্দী বিনিময় হয়েছিল, তবে এই চুক্তিটি একটি স্থায়ী সমাধানের আশা জাগিয়ে তুলেছে।
What's Your Reaction?






