আলফাডাঙ্গার 'শিক্ষার বাতিঘর' শামিমা নাসরিন, পেলেন শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের স্বীকৃতি

ভাবুন তো এমন এক শ্রেণিকক্ষের কথা, যেখানে বইয়ের পাতাগুলো নীরস অক্ষরের সমষ্টি নয়, বরং একেকটি জীবন্ত গল্পের দরজা। যেখানে শিশুরা ভয় বা চাপে নয়, বরং অদম্য কৌতূহল আর আনন্দে মেতে ওঠে জ্ঞানার্জনের উৎসবে। ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় ঠিক এমনই এক জাদুকরী ভুবন গড়ে তুলেছেন ১০ নং নওয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শামিমা নাসরিন। শিক্ষাকে আনন্দময় অভিযানে পরিণত করার এই অসামান্য কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপই তিনি অর্জন করেছেন উপজেলার শ্রেষ্ঠ গুণী সহকারী শিক্ষকের সম্মাননা।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকালে আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে, পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই-বাছাই ও সাক্ষাৎকারের পর তাঁর হাতে এই সম্মানের স্মারক তুলে দেওয়া হয়।
এই প্রাপ্তি যাঁর, সেই শামিমা নাসরিনের চোখেমুখে ছিল তৃপ্তির আলো। নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বিনয়ের সঙ্গে বলেন, "আমি শিশুদের নিয়ে আনন্দে কাজ করি। আমার আপ্রাণ চেষ্টা থাকে, প্রতিটি শিশু যেন পুঁথিগত বিদ্যার পাশাপাশি একজন মানবিক গুণসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে।" এই অর্জনের জন্য তিনি সকলের দোয়া ও আশীর্বাদ প্রত্যাশা করেন।
শিক্ষক হিসেবে তাঁর এই যাত্রার সাক্ষী তাঁর সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীরাও। নওয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহিদুল ইসলাম বলেন, "শামিমা নাসরিন আমাদের প্রতিষ্ঠানের এক অমূল্য সম্পদ। তাঁর পাঠদান পদ্ধতি এতটাই সৃজনশীল ও আকর্ষণীয় যে শিশুরা ক্লাসের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে।"
এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করে আলফাডাঙ্গা সরকারি ডিগ্রি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মনিরুল হক সিকদার বলেন, "শামিমা নাসরিনের মতো নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষকদের এমন স্বীকৃতি পুরো শিক্ষক সমাজকে অনুপ্রাণিত করবে।" একই সুরে কথা বললেন কলেজের প্রভাষক প্রবীর কুমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, "তিনি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন যে, ভালো ফল শুধু সিলেবাস শেষ করে হয় না; এর জন্য প্রয়োজন শিশুদের মন বোঝা এবং তাদের শেখার প্রক্রিয়াকে আনন্দময় করে তোলা।"
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, "শুধু অ্যাকাডেমিক নথি নয়, বরং শ্রেণিকক্ষে তাঁর উদ্ভাবনী শিক্ষাপদ্ধতি, শিশুদের সঙ্গে তাঁর সংযোগ এবং সামগ্রিক অবদানের নিরিখেই তাঁকে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। আমরা তাঁর এই অর্জনে অত্যন্ত গর্বিত।"
এই সম্মাননা কেবল শামিমা নাসরিনের ব্যক্তিগত সাফল্যের স্বীকৃতি নয়, এটি আলফাডাঙ্গার পুরো শিক্ষক সমাজের জন্য এক বাতিঘর। তাঁর এই অর্জন আগামী প্রজন্মের শিক্ষকদের জন্য এক উজ্জ্বল প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে, যা তাদের শেখাবে—ভালোবাসা আর মমতা দিয়েও শিক্ষাকে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেওয়া যায়।
What's Your Reaction?






