সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়তে একমঞ্চে শিক্ষক-অভিভাবক

সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের চাবিকাঠি কার হাতে? কেবল শিক্ষকের? নাকি অভিভাবকের? এই চিরায়ত প্রশ্নের এক চমৎকার সমাধান মিলল ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায়। শিক্ষার মানোন্নয়নের সঙ্গে নৈতিকতার পাঠকে এক সুতোয় গাঁথতে গোপালপুর বায়তুল ফালাহ্ দাখিল মাদ্রাসার প্রাঙ্গণে আয়োজিত হলো এক ব্যতিক্রমী অভিভাবক সমাবেশ। এটি শুধু একটি সভা ছিল না, বরং শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে এক সেতুবন্ধন তৈরির শপথ ছিল, যেখানে মূল লক্ষ্য—শিক্ষার্থীদের মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে অনুষ্ঠিত এই প্রাণবন্ত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রাসেল ইকবাল, যার প্রতিটি কথাই ছিল অনুপ্রেরণামূলক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউএনও রাসেল ইকবাল বলেন, "একটি সমৃদ্ধ জাতি গঠনে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। তবে সেই শিক্ষা হতে হবে মানসম্মত এবং মূল্যবোধ সম্পন্ন।" শিক্ষার্থীদের ক্লাসে নিয়মিত উপস্থিতির ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, "কঠোর অধ্যবসায় ছাড়া ভালো ফলাফল আশা করা যায় না।" মাদ্রাসার শিক্ষকদের পাঠদানের মানে আরও উৎকর্ষ আনার আহ্বান জানিয়ে তিনি নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের চরিত্র গঠনে মাদ্রাসার ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, "ইসলামী মূল্যবোধ ও ধর্মীয় শিক্ষার প্রসার আমাদের শিক্ষার্থীদের শুধু ভালো ছাত্রই নয়, বরং আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে।"
ইউএনও অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, "আপনারা শুধু সন্তানদের মাদ্রাসায় পাঠিয়েই দায়িত্ব শেষ করবেন না। বাড়িতে পড়ার পরিবেশ তৈরি করুন, শিক্ষকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন। আপনার সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কার সাথে মিশছে, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।" তিনি বিগত পরীক্ষার ফলাফলের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতে আরও ভালো করার জন্য মাদ্রাসার কর্মপরিকল্পনা জানতে চান এবং গোল্ডেন জিপিএ-৫ পাওয়া মেধাবী শিক্ষার্থীদের সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো: মোজাম্মেল হক বলেন, "বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে ভালো ফলাফলের কোনো বিকল্প নেই।" তিনি অভিভাবকদের সন্তানদের প্রতি আরও যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানান।
মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আব্দুস সামাদ তাঁর সমাপনী বক্তব্যে বলেন, "আমরা শুধু একাডেমিক শিক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে চাই না, বরং শিক্ষার্থীদের নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধে উন্নত করতেও বদ্ধপরিকর।" তিনি মাদ্রাসার অগ্রযাত্রায় সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।
সিনিয়র শিক্ষক মো: তৈয়াবুর রহমানের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন অভিভাবক প্রতিনিধি সাবিনা ইয়াসমিন, আঃ গফ্ফার ও আফসানা মিমি, শিক্ষক প্রতিনিধি মোসা: আঁখি আক্তার এবং সুধী সমাজের পক্ষ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা খাঁন আসাদুজ্জামান (টুনু) ও আলফাডাঙ্গা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মো: আলমগীর কবির।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আলফাডাঙ্গা উপজেলা প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি সাংবাদিক কবির হোসেন, ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সদস্য মো: আসলাম হোসেন সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং বিপুল সংখ্যক অভিভাবক উপস্থিত ছিলেন। সব মিলিয়ে, এই সমাবেশটি ছিল শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে একটি মজবুত সেতুবন্ধন তৈরির কার্যকর উদ্যোগ, যা মাদ্রাসার শিক্ষার মানোন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।
What's Your Reaction?






