উত্তাল সাগরে ভেসে উঠল মুশফিকের ভাতিজার নিথর দেহ

যে সাগরকে ঘিরে ছিল বন্ধুদের বাঁধভাঙা উল্লাস, সেই সাগরই কেড়ে নিল সব। ২৪ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা আর প্রার্থনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে কক্সবাজারের উত্তাল ঢেউয়ের বুকে ভেসে উঠল তরুণ আহনাফের নিথর দেহ। বন্ধুদের সাথে আনন্দ করতে এসে এমন করুণ পরিণতি হবে, তা হয়তো দুঃস্বপ্নেও ভাবেনি কেউ।
সোমবার ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথেই দুঃসংবাদটি আসে। সমিতি পাড়া পয়েন্টে সাগরে একটি মরদেহ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা লাইফগার্ডকে খবর দেয়। খবর পেয়েই ছুটে যায় সি-সেইফ লাইফগার্ডের উদ্ধারকারী দল এবং আহনাফের শোকাহত পরিবার। অশ্রুসিক্ত চোখে শনাক্ত করা হয়, এ যে তাদেরই আদরের আহনাফ! যে হাসিমুখটা গতকালও সঙ্গীদের মাতিয়ে রেখেছিল, তা আজ চিরতরে শান্ত।
নিহত আহনাফ জাতীয় ক্রিকেট দলের নির্ভরযোগ্য স্তম্ভ মুশফিকুর রহিমের স্ত্রীর বড় বোনের ছেলে। এই মর্মান্তিক ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে জাতীয় ক্রিকেট তারকার পরিবারেও।
ঘটনার শুরুটা ছিল আর দশটা সাধারণ পর্যটকের মতোই। বগুড়া থেকে একদল বন্ধু মিলে স্বপ্নের কক্সবাজারে বেড়াতে আসা। রবিবার দুপুরে লাবণী পয়েন্টের নোনাজলে নেমেছিল তারা। কিন্তু প্রকৃতির রোষ যেন তাদের জন্যই অপেক্ষা করছিল। এক দানবীয় ঢেউয়ের ঝাপটায় মুহূর্তেই ওলটপালট হয়ে যায় সবকিছু। লাইফগার্ড সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আহনাফের দুই বন্ধুকে উদ্ধার করতে পারলেও, তীব্র স্রোত তাকে টেনে নিয়ে যায় গভীর সমুদ্রে। এরপর শুরু হয় এক অসম লড়াই—সময়ের বিরুদ্ধে, প্রকৃতির বিরুদ্ধে।
সি-সেইফ লাইফগার্ডের মাঠ কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, "স্রোত এতটাই তীব্র ছিল যে আমাদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। আজ ভোরে তার মরদেহ উদ্ধারের ঘটনাটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক।"
আহনাফের এই অকাল মৃত্যু কক্সবাজারের সৌন্দর্যের আড়ালে লুকিয়ে থাকা ভয়াল বিপদের কথাই যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। মাত্র দুই মাস আগে সমুদ্র সৈকতে হারিয়ে যাওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অরিত্র হাসানের এখনও কোনো সন্ধান মেলেনি। বারবার এমন ঘটনা পর্যটকদের নিরাপত্তা এবং সমুদ্রে নামার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সতর্কতার প্রয়োজনীয়তাকেই সামনে নিয়ে আসছে।
আনন্দের জন্য সাগরে নামা যেন আর কোনো পরিবারের কান্নার কারণ না হয়, সেই প্রশ্নই এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।
What's Your Reaction?






