ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার সেরা শিক্ষক হলেন আলমগীর খান

কবির হোসেন, আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর ) প্রতিনিধিঃ
Sep 14, 2025 - 13:30
 0  13
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার সেরা শিক্ষক হলেন আলমগীর খান

শিক্ষক মানেই এক নিপুণ কারিগর, যিনি পরম মমতায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মনে বুনে দেন স্বপ্নের বীজ, গড়ে তোলেন আগামীর প্রজন্ম। যখন সেই নিভৃতচারী কারিগরের নিষ্ঠা আর সাধনা পায় আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি, তখন তা কেবল একজন ব্যক্তির অর্জন থাকে না, হয়ে ওঠে পুরো সমাজের জন্য এক অনুপ্রেরণার বাতিঘর। ঠিক তেমনি এক গৌরবের আলোয় আজ উদ্ভাসিত ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা। শিক্ষার মানোন্নয়নে অসামান্য অবদান, উদ্ভাবনী শিক্ষাদান কৌশল এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি অকৃত্রিম স্নেহ ও দায়বদ্ধতার বিরল স্বীকৃতিস্বরূপ উপজেলার শ্রেষ্ঠ গুণী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ৬২ নং চরখোলাবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলমগীর খান।

তাঁর এই অর্জনে উচ্ছ্বসিত আলফাডাঙ্গার শিক্ষাবিদ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ। এই সম্মাননাকে ঘিরে তাঁদের মূল্যবান মতামতে ফুটে উঠেছে একজন আদর্শ শিক্ষকের প্রতিচ্ছবি।

এই অর্জনের সামাজিক তাৎপর্য তুলে ধরে উপজেলা ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক মিয়া রাকিবুল ইসলাম বলেন, "শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে আলমগীর খানের এই নিরলস প্রচেষ্টা সত্যিই প্রশংসনীয়। গুণী শিক্ষকদের এমন সম্মাননা সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে বড় ভূমিকা রাখে।"

প্রাথমিক শিক্ষক সমাজের গর্ব প্রকাশ করে সমিতির সাধারণ সম্পাদক শামসের উদ্দিন টিটো বলেন, "আলমগীর খান স্যার আমাদের সকলের জন্য অনুপ্রেরণার এক বাতিঘর। তাঁর এই সম্মান আমাদের প্রাথমিক শিক্ষকদের মনোবলকে আরও দৃঢ় করবে এবং পেশার প্রতি ভালোবাসা বাড়াবে।"

আলফাডাঙ্গা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আলমগীর কবিরের মতে, "আলমগীর খানের এই স্বীকৃতি আমাদের উপজেলাকে গর্বিত করেছে। একজন শিক্ষক হিসেবে তিনি যে নিষ্ঠা ও দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়েছেন, তা নতুন প্রজন্মের শিক্ষকদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।"

"শিক্ষকরাই জাতি গঠনের মূল কারিগর," মন্তব্য করে আলফাডাঙ্গা সরকারি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মোরাদ হোসেন তালুকদার বলেন, "আলমগীর খানের মতো একজন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক যখন শ্রেষ্ঠত্বের সম্মাননা পান, তখন তা প্রমাণ করে যে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করলে তার স্বীকৃতি একদিন মিলবেই। তিনি শুধু একজন শিক্ষক নন, তিনি একজন পথপ্রদর্শক।"

তবে সাফল্যের এই শিখরে পৌঁছেও বিনয়ে অবনত এই গুণী শিক্ষক। নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে আলমগীর খান বলেন, "এই সম্মান আমার একার নয়; এটি আমার বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল। আমি কেবল আমার ওপর অর্পিত দায়িত্বটুকু সততার সঙ্গে পালন করার চেষ্টা করেছি। এই স্বীকৃতি আমাকে আগামীতে আরও বেশি উৎসাহের সঙ্গে কাজ করার প্রেরণা জোগাবে।"

আলমগীর খানের এই সাফল্যকে পুরো উপজেলার শিক্ষা ব্যবস্থার অগ্রগতির প্রতীক হিসেবে দেখছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, "আলমগীর খান আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারের একজন গর্বিত সদস্য। আমরা আশা করি, তাঁর দেখানো পথে হেঁটে আরও অনেক শিক্ষক এগিয়ে আসবেন এবং শিক্ষার মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন।"

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল ইকবাল এই অর্জনকে উপজেলার শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নের প্রতিফলন হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, "আলমগীর খানের মতো গুণী শিক্ষকদের অনুপ্রেরণাতেই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা আরও সমৃদ্ধ হবে এবং আলোকিত মানুষে ভরে উঠবে দেশ।"

আলমগীর খানের এই স্বীকৃতি শুধু একটি ব্যক্তিগত অর্জন নয়, এটি আলফাডাঙ্গার সমগ্র শিক্ষক সমাজের জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাঁর পথ ধরে আগামী দিনে আরও অনেক নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক জ্ঞানের মশাল হাতে এগিয়ে আসবেন, এই প্রত্যাশা এখন সকলের।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর), বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে তাঁর হাতে এই সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয়।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow