সালথায় পেঁয়াজের দরপতনে হতাশ কৃষক

জাকির হোসেন, স্টাফ রিপোর্টারঃ
Jun 27, 2025 - 15:23
 0  3
সালথায় পেঁয়াজের দরপতনে হতাশ কৃষক

পেঁয়াজ উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় এবার চাষিরা পড়েছেন চরম সংকটে। মৌসুমের শুরুতে ভালো দামের আশায় যারা আশাবাদী ছিলেন, মৌসুম শেষে তারা পড়েছেন চরম হতাশায়। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে মণপ্রতি পেঁয়াজের দাম হঠাৎ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত কমে যাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছেন হাজারো কৃষক।

পেঁয়াজ চাষে জমি প্রস্তুত, সার, বীজ, কীটনাশক, সেচ ও শ্রমিকের খরচ মিলিয়ে প্রতি মণ পেঁয়াজ উৎপাদনে কৃষকের খরচ পড়েছে প্রায় ২ হাজার টাকা। অথচ এখন সেই পেঁয়াজ বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র ১৪৫০ থেকে ১৬০০ টাকায়। এতে প্রতি মণে গড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা করে লোকসান গুনতে হচ্ছে।

শুক্রবার (২৭ জুন) সরেজমিনে উপজেলার বালিয়া বাজার ও ঠেনঠেনিয়া হাট ঘুরে দেখা যায়, বিক্রেতার ভিড়ে ক্রেতা নেই বললেই চলে। অনেক কৃষক পেঁয়াজ নিয়ে এসে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। কেউ কেউ আবার পচে যাওয়ার আগেই কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।

পেঁয়াজ চাষি খলিল হোসেন আক্ষেপ করে বলেন, "ভালো দামের আশায় ঘরে রেখেছিলাম। এখন ৩০ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। বাকিটাও বিক্রি করছি লোকসানে। সরকার যদি ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ করত, তাহলে এমন অবস্থা হতো না।"

সালথা উপজেলার বিভিন্ন হাটে যেমন—নকুলহাটি, ঠেনঠেনিয়া, সালথা সদর, বালিয়া গট্টি, কাগদি, জয়কাইল, মোন্তার মোড়, মাঝারদিয়া, বাউষখালী ও যদুনন্দী হাটে প্রতিদিন হাজার হাজার মণ পেঁয়াজের কেনাবেচা হলেও কৃষকদের মুখে নেই হাসি। স্থানীয়রা বলছেন, ঘাম ঝরিয়ে ফলানো পেঁয়াজ এবার লোকসানের ট্রাকে করেই ঘরে ফিরছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে সালথায় ১২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে এবং উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি।

উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি অফিসার সুদীপ বিশ্বাস বলেন, “ফলন ভালো হওয়ায় সরবরাহ বেড়েছে। ফলে দাম কিছুটা কমেছে। আমরা কৃষকদের উৎসাহ দিয়ে পাশে আছি।”

অপরদিকে, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুদর্শন সিকদার জানান, “বাজার চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্য না থাকায় এমন পরিস্থিতি হয়েছে। আশা করি পরিস্থিতির উন্নতি হবে।”

কৃষকদের দাবি, পেঁয়াজের মতো মৌলিক কৃষিপণ্যের জন্য সরকারিভাবে ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কোল্ডস্টোরেজ নির্মাণ জরুরি। এতে সংরক্ষণের সুবিধা থাকলে কৃষকরা বাজার বুঝে বিক্রি করতে পারতেন এবং লোকসানের হাত থেকে রক্ষা পেতেন।

চাষি সিরাজ মোল্যা বলেন, “আমরা চাই সরকার প্রতি মণ পেঁয়াজের দাম কমপক্ষে ২২০০ টাকা নির্ধারণ করুক। না হলে আমরা ক্ষুদ্র চাষিরা পেঁয়াজ চাষ ছেড়ে দিতে বাধ্য হবো।”

বর্তমানে সালথার হাজারো কৃষক চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন পার করছেন। সরকার দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন দেশের অন্যতম প্রধান এই কৃষি অঞ্চলের কৃষকেরা।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow