শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রাস্তা বন্ধ, মিঠাপুকুরে জনরোষে আওয়ামী লীগ নেতা

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার শুকুরেরহাট ইসলামিয়া আলিম মাদরাসাসহ তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্য দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত চলাচলের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা প্রভাবশালী ব্যক্তি কর্তৃক বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে ওই এলাকার শত শত শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সাধারণ পথচারীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনায় জনমনে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—শুকুরেরহাট ইসলামিয়া আলিম মাদরাসা, শুকুরেরহাট উচ্চ বিদ্যালয় এবং শুকুরেরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্থানীয়দের দাবি, দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে ব্যবহৃত রাস্তাটি হঠাৎ করেই বন্ধ করে দিয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি আব্দুল হাকিম। তিনি ট্রাক্টর দিয়ে রাস্তায় মাটি ফেলে চলাচল বন্ধ করে দেন। মাদরাসার অধ্যক্ষ ফজলুল হক বলেন, "রাস্তাটি দিয়ে ১৯৭৪ সাল থেকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করে আসছে। এখন হঠাৎ এক ব্যক্তির দাপটে সে পথই রুদ্ধ হয়ে গেছে।"
সরেজমিনে দেখা গেছে, মোসলেমবাজার থেকে দর্শনামুখী রাস্তাটির একটি সংযোগ শাখা শুকুরেরহাট ইসলামিয়া আলিম মাদরাসা হয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছায়। রাস্তার মাঝখানে মাটি ফেলে রেখে চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের প্রায় এক মাইল ঘুরে ক্লাসে যেতে হচ্ছে। কেউ কেউ সাইকেল কাঁধে নিয়ে কষ্ট করে যাতায়াত করছে। দুর্গম পথ পাড়ি দিতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের শারীরিক কষ্ট ছাড়াও মানসিক ভোগান্তিও পোহাতে হচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন, সরকারিভাবে নির্মিত হেরিংবোন রাস্তা বন্ধ করার কোনো বৈধতা নেই।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে মোতাসিম বিল্লাহ, সামিউল, মুরাদ ও মেহেদী বলেন, “আমরা ছোট থেকেই এই রাস্তা দিয়ে চলি। এখন হঠাৎ করে বন্ধ করে দেওয়ায় প্রতিদিন এক মাইল বেশি হেঁটে যেতে হচ্ছে। এটা আমাদের সঙ্গে অন্যায়। প্রয়োজনে আমরা আন্দোলনে নামব।”
অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত আব্দুল হাকিম দাবি করেন, “এই জায়গা আমার পৈতৃক সম্পত্তি। আমি মাটি ফেলেছি, কী সমস্যা?” তার ছোট ভাই মঞ্জুরুল ইসলাম লেলিন, যিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাবেক ইউনিয়ন সেক্রেটারি, সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে দাম্ভিকতার সুরে বলেন, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রাস্তা বন্ধ তাতে কী? আগে এখানে গর্ত ছিল, আওয়ামী লীগের টাকায় ভরাট করেছি। আশপাশের সব জায়গা আমাদের বাপ-দাদার। কেউ কিছু করতে পারবে না।”
এ ধরনের বক্তব্যে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। অনেকে বলছেন, রাজনৈতিক পরিচয় ও দাপট দেখিয়ে জনস্বার্থে তৈরি সরকারি রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা দুঃখজনক ও আইনবিরুদ্ধ।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল হাকিম মণ্ডল বলেন, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রাস্তা বন্ধ করা অযৌক্তিক ও নিন্দনীয়। এটি শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করছে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিকাশ চন্দ্র বর্মণ জানান, “অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। স্থানীয় চেয়ারম্যানকে ইতিমধ্যে বিষয়টি দেখতে বলা হয়েছে।”
এলাকাবাসী প্রশাসনের কাছে দ্রুত পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
What's Your Reaction?






