পিরোজপুরে ঝুঁকিপূর্ণ ৫৫ কিমি বেড়িবাঁধ, বর্ষা সামনে রেখে নদীপাড়ে আতঙ্ক

পিরোজপুরের অধিকাংশ বেরিবাঁধ এখন চরম ঝুঁকির মুখে। বর্ষা মৌসুম ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে নদীতীরবর্তী মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন আতঙ্ক। বছর ঘুরে বর্ষা এলেই ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়ে জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি, মাছের ঘের ও বসতঘর। আর এসব ক্ষয়ক্ষতি রোধে টেকসই বেড়িবাঁধের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী দাবি জানিয়ে আসছে।
সরেজমিনে সদর উপজেলার হরিণা গাজীপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কঁচা নদীর ভাঙনে বসতভিটা ও প্রায় ১৫ কাঠা জমি হারিয়ে নিঃস্ব জীবনযাপন করছেন আসিফ হাওলাদার। একসময় জমিজমা, ঘরবাড়ি থাকলেও এখন তার কিছুই নেই। এ যেন এক জীবন্ত উদাহরণ নদীভাঙনের নিষ্ঠুরতার।
শুধু আসিফ হাওলাদার নন, পিরোজপুরের বিভিন্ন নদী তীরবর্তী অঞ্চলের হাজারো মানুষ প্রতিবছরই এমন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। নদীকেন্দ্রিক জীবনধারা এবং অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল এই অঞ্চলের মানুষ বর্ষাকালে দুর্বিষহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। নদীর পানি যখন নামতে শুরু করে, তখন প্রবল স্রোতে ভেঙে পড়ে বেড়িবাঁধ। এতে ঘরবাড়ি, হাটবাজার, ফসলি জমি এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও নদীগর্ভে হারিয়ে যায়।
সদর উপজেলার শংকরপাশা ইউনিয়নের বাদুরা গ্রামের বাসিন্দা কামল খান জানান, “২০০৭ সালের সিডরের সময় আমাদের এলাকা লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল। তখনকার ভাঙা বেড়িবাঁধ এখনো ঠিক হয়নি। ফলে প্রতি বছর জোয়ারের পানিতে ডুবে থাকি। আমাদের জীবন হয়ে উঠেছে দুঃসহ।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের বর্তমান বেড়িবাঁধগুলো এতটাই দুর্বল যে সামান্য জোয়ারেই সেগুলো ভেঙে পড়ে। এতে ঘরবাড়ি ভেসে যায়, ফসল নষ্ট হয়, বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দেয়। এসব অস্থায়ী বাঁধ আমাদের কোনো নিরাপত্তা দিতে পারছে না।”
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৩১০ কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়িবাঁধের মধ্যে ৫৫ কিলোমিটারই বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ। নির্বাহী প্রকৌশলী নুসাইর হোসেন জানিয়েছেন, “পিরোজপুরের ৬টি পোল্ডারের ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য প্রাথমিকভাবে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। বরাদ্দ পাওয়া গেলে দ্রুত মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
জেলার মানুষের প্রাণ-সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি বেরিবাঁধ নির্মাণের দাবি দিন দিন জোরালো হচ্ছে। আগামী বর্ষার আগেই এসব বাঁধ যথাযথভাবে মেরামত না হলে পিরোজপুরবাসীর দুর্ভোগ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
What's Your Reaction?






