চন্দ্রঘোনা-রাইখালী রুটে ফেরি চলাচল বন্ধে জনদুর্ভোগ চরমে

রিপন মারমা, কাপ্তাই প্রতিনিধি, রাঙ্গামাটিঃ
Sep 10, 2025 - 12:40
 0  12
চন্দ্রঘোনা-রাইখালী রুটে ফেরি চলাচল বন্ধে জনদুর্ভোগ চরমে

টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কাপ্তাই হ্রদের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে কর্ণফুলী নদীতে সৃষ্ট প্রবল স্রোতের কারণে বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) ভোররাত ৩টা থেকে চন্দ্রঘোনা-রাইখালী নৌপথে ফেরি চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই আকস্মিক বন্ধের ফলে নদীর দুই তীরে আটকা পড়েছেন শত শত যাত্রী, সৃষ্টি হয়েছে তীব্র জনদুর্ভোগ এবং দীর্ঘ যানজট।

রাঙ্গামাটি সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) রনেল চাকমা বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, কাপ্তাই হ্রদের পানি বিপদসীমার ওপরে প্রবাহিত হওয়ায় মঙ্গলবার গভীর রাতে বাঁধের ১৬টি জলকপাট সাড়ে তিন ফুট পর্যন্ত খুলে দেওয়া হয়। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৬৩ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলী নদীতে নিষ্কাশিত হচ্ছে, যা নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকে ভয়ঙ্করভাবে বাড়িয়ে তুলেছে। জানমালের নিরাপত্তা ও দুর্ঘটনা এড়াতে কর্তৃপক্ষ ফেরি চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে।

বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকালে চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাটে গিয়ে দেখা যায় এক অচলাবস্থার চিত্র। নদীর দুই পাড়ে পারাপারের অপেক্ষায় আটকে আছে বাস, ট্রাক ও ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। যাত্রীদের চোখেমুখে ফুটে উঠেছে চরম ভোগান্তি ও অনিশ্চয়তার ছাপ।

বান্দরবান থেকে আসা যাত্রী উজ্জ্বল বড়ুয়া ক্ষোভের সাথে বলেন, "প্রাকৃতিক কারণে এই রুটে প্রায়ই ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে, যার ফলে আমাদের মতো সাধারণ মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এখানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি আমাদের দীর্ঘদিনের। একটি সেতু হলেই এই জনদুর্ভোগের স্থায়ী সমাধান সম্ভব।"

অটোরিকশা চালক মোহাম্মদ সাইমন তার অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন, "ওপারে যাওয়ার জন্য এসে দেখি ফেরি বন্ধ। আমাদের কষ্টের কোনো শেষ নেই। এখানে একটা সেতু হলে আমাদের দুঃখ কিছুটা কমত।"

ফেরিঘাটের দায়িত্বে থাকা ইনচার্জ মো. শাহজাহান এবং চালক মো. সিরাজ জানান, "কাপ্তাই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পানি ছাড়ার কারণে নদীতে স্রোত অনেক বেশি। নিরাপত্তার কারণে বুধবার ভোররাত ৩টা থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। স্রোতের তীব্রতা কমলে আমরা আবার ফেরি চালুর চেষ্টা করব।"

উল্লেখ্য, এই রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ হওয়া কোনো নতুন ঘটনা নয়। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে কাপ্তাই বাঁধের জলকপাট খোলার কারণে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখতে হয়েছে। দশকের পর দশক ধরে স্থানীয় অধিবাসীরা একটি স্থায়ী সেতুর দাবি জানিয়ে আসলেও তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি, ফলে ভোগান্তিই যেন এই অঞ্চলের মানুষের नियতি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow