কামরুল নাহারের খামারে ‘পিকিং স্টার ১৩’ হাঁস, বদলে দিল জীবনের গল্প

ফরিদপুরের অমরপুর গ্রামের নারী উদ্যোক্তা কামরুল নাহার বিদেশি জাতের ‘পিকিং স্টার ১৩’ হাঁস পালনের মাধ্যমে সাফল্যের নতুন গল্প রচনা করেছেন। তাঁর খামারে এই হাঁস খাঁচায় পানির প্রয়োজন ছাড়াই পালনযোগ্য এবং মাত্র ৪৫ দিনে ৩ থেকে ৪ কেজি ওজনের হয়। প্রতি কেজি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি করে তিনি উল্লেখযোগ্য লাভ করছেন। বাজারে এই হাঁসের চাহিদা দিন দিন বেড়ে চলায় তাঁর ব্যবসা দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে।
একসময় কামরুল নাহার মুরগি পালন করতেন। কিন্তু বারবার রোগব্যাধির কারণে তিনি ক্ষতির মুখে পড়েন। ঠিক তখনই বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘সোসাইটি ডেভেলপমেন্ট কমিটি’ (এসডিসি) তাকে ‘পিকিং স্টার ১৩’ হাঁস পালনের পরামর্শ দেয়। এসডিসির প্রকল্প ব্যবস্থাপক ডা. বিপ্লব কুমার মোহন্ত জানান, “আমরা তাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ৫০টি হাঁসের বাচ্চা দিয়েছিলাম। এর মধ্যে দুটি মারা গেলেও ৪৮টি হাঁস বিক্রি করে তিনি ৪৮ হাজার টাকা আয় করেন। এরপর তিনি ২০০টি হাঁস নিয়ে বড় পরিসরে খামার শুরু করেন। এখন তিনি ৫০০টি হাঁসের খামারের পরিকল্পনায় রয়েছেন।”
নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে কামরুল নাহার বলেন, “মুরগি পালনে বড় ধরনের ক্ষতির পর আমি ভেঙে পড়েছিলাম। তখনই এসডিসির সহায়তায় হাঁস পালনের নতুন পথ খুলি। এই জাতের হাঁস পালন সহজ, খরচ কম এবং লাভ বেশি। এখন ফরিদপুরের হোটেল তো বটেই, আশপাশের জেলাতেও আমার হাঁস সরবরাহ হচ্ছে। খুব শিগগিরই ৫০০ থেকে ১,০০০ হাঁস পালনের উদ্যোগ নিচ্ছি।”
ফরিদপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সঞ্জীব কুমার বিশ্বাস বলেন, “কামরুল নাহারের খামার একটি দৃষ্টান্ত। তাঁকে আমরা নিয়মিত প্রযুক্তিগত পরামর্শ, ওষুধ ও বাজার সংযোগে সহায়তা করছি। স্থানীয় হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলোতে তার হাঁস সরবরাহের জন্য উদ্যোক্তাদের সঙ্গে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। এর ফলে নারী উদ্যোক্তাদের স্বনির্ভরতা আরও শক্তিশালী হচ্ছে।”
কামরুল নাহারের খামার এখন তাঁর প্রতিবেশীদের মধ্যেও কৌতূহল সৃষ্টি করেছে। তারা বলেন, “আমরা কেন দূরে গিয়ে হাঁস কিনব? গ্রামেই আধুনিক খামারে স্বাস্থ্যকর হাঁস সহজে কিনে নেওয়া যাচ্ছে।” ফলে গ্রামীণ বাজারেও তিনি একটি নির্ভরযোগ্য ব্র্যান্ড হয়ে উঠেছেন।
শুধু হাঁস পালনেই থেমে থাকেননি কামরুল নাহার। খামারের পাশে তিনি ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদনের ব্যবস্থাও গড়ে তুলেছেন। এই সার বিক্রি করে তিনি বাড়তি আয় করছেন, যা তাঁর উদ্যোগের বহুমাত্রিক সাফল্যকে আরও দৃঢ় করেছে।
এসডিসির প্রকল্প ব্যবস্থাপক ডা. বিপ্লব কুমার মোহন্ত জানান, “ফরিদপুরের পাঁচটি উপজেলায় আমাদের এই প্রকল্পটি চলমান রয়েছে। কামরুল নাহারের সফলতা অন্য নারীদেরও উদ্বুদ্ধ করছে। তিনি একজন সত্যিকারের রোল মডেল।”
অদম্য ইচ্ছাশক্তি, সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত এবং প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তার সমন্বয়ে কামরুল নাহার শুধু নিজেকে নয়, পুরো এলাকা ও নারী সমাজকে দেখিয়েছেন একটি নতুন স্বপ্নের পথ। তাঁর এই উদ্যোগ প্রমাণ করেছে, সঠিক দিকনির্দেশনা ও সাহস থাকলে গ্রামীণ নারীরাও হয়ে উঠতে পারেন সফল উদ্যোক্তা।
What's Your Reaction?






