"আমার মাইয়ার খুনিগো ফাঁসি চাই" - মায়ের আর্তনাদে কাঁপল নোয়াখালী

"আমার মাইয়ারে মাইরা ফালাইছে, আমি খুনিগো ফাঁসি চাই"—মেয়ের ছবি বুকে জড়িয়ে এভাবেই আর্তনাদ করছিলেন মা খাইরুন নাহার। তার কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছিল নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট জিরো পয়েন্টের বাতাস। যৌতুকের জন্য নির্মমভাবে হত্যার শিকার হওয়া দুই সন্তানের জননী সাঈদা আক্তার পপির (২৫) জন্য বিচারের দাবিতে আজ রাজপথে নেমে এসেছিলেন তার স্বজন ও শত শত এলাকাবাসী। তাদের সম্মিলিত বিক্ষোভে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।
বুধবার (৩০ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে বসুরহাট জিরো পয়েন্টে আয়োজিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। অংশগ্রহণকারীরা পপি হত্যাকাণ্ডে জড়িত স্বামী শফি উল্যাহ শিপনসহ তার পরিবারের সদস্যদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
মানববন্ধনে বক্তারা জানান, সাত বছর আগে মুছাপুর ইউনিয়নের মক্কা নগরের শফি উল্যাহ শিপনের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় পপির। তাদের কোলজুড়ে আসে দুটি ফুটফুটে ছেলে সন্তান। কিন্তু সুখ বেশিদিন সইল না। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য পপির উপর নেমে আসে অকথ্য নির্যাতন। স্বামী শিপন ও তার পরিবার প্রায়ই তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করত। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার সালিশ-দরবার হলেও থামেনি সেই দানবীয় অত্যাচার।
অভিযোগ ওঠে, গত বুধবার (২৩ জুলাই) দিবাগত রাতে পপির উপর নির্যাতনের মাত্রা চরমে পৌঁছায়। রাতভর নির্যাতনের পর তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। পরদিন সকালে ঘটনা ধামাচাপা দিতে হাসপাতালে নেওয়ার নাটক সাজায় শিপনের পরিবার। কিন্তু পরিস্থিতি বেগতিক দেখে বাড়িতে পপির মরদেহ ফেলে রেখে ‘আত্মহত্যা’ বলে প্রচার করে পুরো পরিবার পালিয়ে যায়।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে পপির মা খাইরুন নাহার বলেন, "প্রথমে থানায় পুলিশ মামলা নিতে চায়নি। পরে আমরা বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছি। আমি আর কিছু চাই না, শুধু আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।"
এদিকে, অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত স্বামী শফি উল্যাহ শিপনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী মুহাম্মদ ফৌজুল আজিম জানান, "মরদেহটি সন্দেহজনক অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে এবং নিহতের গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে নিহতের শ্বশুরকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলেই মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে এবং সে অনুযায়ী পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"
বর্তমানে অভিযুক্তরা পলাতক থাকায় এবং পুলিশি তদন্ত চলমান থাকায় পপির পরিবার ও এলাকাবাসী এখন কেবলই ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে।
What's Your Reaction?






