আবু সাঈদের বিচার চেয়ে সরব থাকা শিক্ষক মাহমুদুল হক কারাগারে, উত্তাল বেরোবি ক্যাম্পাস

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মাহমুদুল হককে ‘মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ মামলায় গ্রেফতারের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে পুরো ক্যাম্পাস। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বিকেলে রংপুরের ধাপ এলাকার নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে হাজিরহাট থানা পুলিশ। পরে সন্ধ্যায় আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এই ঘটনার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। শুক্রবার (২০ জুন) জুমার নামাজের আগে ও পরে দুটি পৃথক বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়—একটি মিডিয়া চত্বরে, অন্যটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে। বিক্ষোভে অংশ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং তিন দফা দাবি উত্থাপন করেন।
তিন দফা দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—মাহমুদুল হকের নিঃশর্ত মুক্তি, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মামলা দায়েরের পেছনে যেসব চক্রান্তকারী জড়িত তাদের শনাক্ত করে তদন্ত কমিটি গঠন এবং তদন্ত প্রতিবেদন না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন। বিক্ষোভকারীরা জানান, এ ধরনের মিথ্যা মামলার মাধ্যমে একজন প্রগতিশীল ও বিবেকবান শিক্ষককে হয়রানি করা হয়েছে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার সোহাগ বলেন, “স্যার জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সদস্য, ডেইলি স্টারের সাবেক সাংবাদিক, একজন নির্ভীক শিক্ষক। তার বিরুদ্ধে মামলাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।” তিনি আরও বলেন, “এটি শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির নয়, সমগ্র শিক্ষক সমাজের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. ইউসুফ বলেন, “মাহমুদুল হককে টার্গেট করে হয়রানি করা হচ্ছে। এটি শিক্ষক সমাজের প্রতি একটি ভয়াবহ হুমকি। আমাদেরকে ভয় দেখিয়ে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।”
অন্যদিকে, মাহমুদুল হকের স্ত্রী মাসুবা হাসান মুন গণমাধ্যমকে জানান, “পুলিশ কোনো ধরনের ওয়ারেন্ট ছাড়াই তাকে গ্রেফতার করেছে। কথা বলার সুযোগ দেয়নি, অপমান করেছে। পুরো বিষয়টিই ছিল পূর্বপরিকল্পিত। আমাদের পরিবারের নিরাপত্তা নিয়েও এখন শঙ্কা রয়েছে।”
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মাহমুদুল হক সম্প্রতি সাংবাদিক আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে বিভিন্ন সময়ে সোচ্চার ভূমিকা পালন করেন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, তার এই কার্যক্রমের জেরেই তাকে টার্গেট করা হয়েছে।
ঘটনার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন একাত্মতা প্রকাশ করে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছে। তারা বলেছেন, একজন শিক্ষকের গ্রেফতারের মাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে, যা একটি ভয়াবহ নজির স্থাপন করবে। শিক্ষকরা প্রশাসনের প্রতি অবিলম্বে মাহমুদুল হকের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন।
What's Your Reaction?






